Header Ads

Header ADS

আমরা কি মুসলিম শাসকের আনুগত্য করব

মুসলিম আমীর বা শাসকদের ব্যপারে আমাদের দৃষ্টিভংগি কেমন হওয়া উচিত?
(১) ইমাম আবু জাফর আত-তাহাবী রাহিমাহুল্লাহ (মৃত্যু ৩২১ হিজরী), তার বিখ্যাত আহলে “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের আকীদা” নামক কিতাবে উল্লেখ করেছেনঃ
“আমীর ও শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করাকে আমরা জায়েয মনে করি না, যদিও তারা যুলুম-অত্যাচার করে। আমরা তাদেরকে অভিশাপ দিব না, এবং তাদের আনুগত্য হতে হাত গুটিয়ে নিব না। তাদের আনুগত্য আল্লাহর আনুগত্যের সাপেক্ষে ফরয, যতক্ষণ না তারা আল্লাহর অবাধ্যচরণের আদেশ দেয়। আমরা তাদের মঙ্গল ও কল্যাণের জন্য দুয়া করব।”
আকীদাহ আত-ত্বাহাবীয়া।
(২)  মুসলমান শাসকদেরকে গালিগালাজ করা, মিম্বারে বসে তাদের সমালোচনা করে, জনগণকে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্যে উস্কে দেওয়া মনপূজারী, বেদাতী ও খারজীদের একটা লক্ষণ। ইমাম আল-বারবাহারি রাহিমাহুল্লাহ (মৃত্যু ৩২৯ হিজরী) বলেছেন,
“যদি তুমি কোন ব্যক্তিকে দেখো সে শাসকদের জন্য বদদুয়া করছে, তাহলে জেনে রাখো সে একজন মনপূজারী, বিদআ'তী। আর তুমি যদি কোন ব্যক্তিকে দেখো যে, সে শাসকদের জন্য কল্যাণের দুয়া করছে, তাহলে সে একজন আহলে সুন্নাহ, ইন শা’ আল্লাহ।”
শরাহুস সুন্নাহঃ পৃষ্ঠা ১১৩-১১৪।
(৩) ইমাম আল-বারবাহারি রাহিমাহুল্লাহ আরো বলেছেন,
“যে ব্যক্তি কোন মুসলিম শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে সে
ক. খারেজীদের মধ্যে একজন,
খ. সে মুসলিমদের মাঝে বিভক্তি সৃষ্টি করলো,
গ. সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীসের বিরোধীতা করলো এবং,
ঘ. তার মৃত্যু যেন ‘জাহেলী’ যুগের মৃত্যুর মতো।
শরাহুস সুন্নাহঃ পৃষ্ঠা ৪২।

আল্লামা মোল্লা আলী কারী রহঃ শরহে ফিক্বহুল আকবারে বলেন- ﺍﻥ ﺍﻟﻤﺴﺌﻠﺔ ﺍﻟﻤﺘﻌﻠﻘﺔ ﺑﺎﻟﻜﻔﺮ ﺍﺫﺍ ﻛﺎﻥ ﻟﻪ ﺗﺴﻊ ﻭﺗﺴﻌﻮﻥ ﺍﺣﺘﻤﺎﻻ ﻟﻠﻜﻔﺮ ﻭﺍﺣﺘﻤﺎﻝ ﻭﺍﺣﺪ ﻓﻰ ﻧﻔﻴﻪ ﻓﺎﻻﻭﻟﻰ ﻟﻠﻤﻔﺘﻰ ﻭﺍﻟﻘﺎﺿﻰ ﺍﻥ ﻳﻌﻤﻞ ﺑﺎﻻﺣﺘﻤﺎﻝ ﺍﻟﻨﺎﻓﻰ، ﻻﻥ ﺍﻟﺨﻄﺎ ﻓﻰ ﺍﺑﻘﺎﺀ ﺍﻟﻒ ﻛﺎﻓﺮ ﺍﻫﻮﻥ ﻣﻦ ﺍﻟﺨﻄﺎﺀ ﻓﻰ ﺍﻓﻨﺎﺀ ﻣﺴﻠﻢ ﻭﺍﺣﺪ، ‏( ﺷﺮﺡ ﺍﻟﻔﻘﻪ ﺍﻻﻛﺒﺮ 199- অর্থাৎ নিশ্চয় কুফরী সম্পর্কিত বিষয়ে জানতে হবে যে, যখন কোনো বিষয়ে ৯৯ ভাগ সম্ভাবনা থাকে কুফরীর আর এক ভাগ সম্ভাবনা থাকে কুফরী না হওয়ার, তখন মুফতী ও বিচারকের জন্য উচিত হল কুফরী না হওয়ার উপর আমল করা। কেননা ভুলের কারণে এক হাজার কাফের বেঁচে থাকার চেয়ে ভুলক্রমে একজন মুসলমান ধ্বংস হওয়া জঘন্য। {শরহু ফিক্বহুল আকবার-১৯৯}

ফ্বিসক ও যুলুমের মত কুফরও দুইভাগে বিভক্ত। খারেজীদের বিভ্রান্তির মূল কারণ হল তারা ইত্তিহলালী ক্বলবী ও ইত্তিহলালী আমালী কুফরকে এক করে ফেলছে। অথচ ইত্তিহলালী আমালি কুফরের কারণে কোন মুসলিম কাফের হয় না যতক্ষণ পর্যন্ত তা ইত্তিহলালী ক্বলবী হবে। অর্থাৎ আন্তরিকভাবে (মন থেকে আকীদাগতভাবে) কোন হারাম কাজকে যদি হালাল মনে করে তবেই কাফের হয়ে যাবে। যদি কোন ব্যক্তি বা শাসক সুদ কিংবা মদকে আমলগতভাবে হালাল করে কিন্তু আকীদাগতভাবে হারাম মনে করে তবেই এইক্ষেত্রে হুকুম হল তাকে কাফের বলা যাবে না। একটা বিখ্যাত হাদিস আমরা সবাই জানি। যেইখানে একজন সাহাবী যুদ্ধের ময়দানে এক মুশরিক সেনাকে হত্যা করতে চাইলে ওই মুশরিক কালেমা পাঠ করে। কিন্তু সাহাবী তাকে হত্যা করে। এই কথা রাসুল(সা) শুনলে বারবার ওই সাহাবীকে তিরস্কার করতে লাগলেন। উক্ত সাহাবী অজুহাত পেশ করলেন মৃত্যু ভয়ে ওই ব্যক্তি কালেমা পড়েছিল। রাসুল (সা) তাকে বলতে লাগলেন, তুমি কি তার অন্তর ছিঁড়ে দেখেছিলে (দেখুন: মিশকাত ৭/৩৩০৩ হাদিস)। এই হাদিসটা একদম জ্বলন্ত প্রমাণ যখন কেউ কালেমার স্বীকৃতি দিবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে কাফের বলা যাবে না যদিও সে আমলগত কুফরে লিপ্ত থাকে। যদি আকীদাগত কুফর তার কাছ থেকে মুখ দ্বারা কিংবা কাজে প্রকাশ পায় তবেই তখন কেবল তার উপর তাকফীরের হুকুম প্রযোজ্য হবে। এইরকম আরেকটা উদাহরণ হল: রাসুল(সা) বলেন, মুসলিমকে গালি দেয়া ফাসেকী আর তার সাথে ঝগড়া করা কুফরি (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ৪৮)। এইখানে যদি এই কুফর আকীদাগত কুফর হয় তবে অধিকাংশ মুসলিম তো কাফের হয়ে যাবে। অথচ উক্ত হাদিসে কুফর বলতে বুঝানো হয়েছে আমালী কুফর। হে যুবক সম্প্রদায় মুসলিমকে তাকফীর করা খুবই ভয়াবহ ব্যপার। আর সেই মুসলিম যদি শাসক হয় তাহলে তাকফীর করা তো আরো ভয়ানক। কেননা, শাসকদের অনিচ্ছা স্বত্বেও অনেক কাজ করতে হয় যা কুফর পর্যায়ের। শাসক নামাজ পড়ছে, যাকাত দিচ্ছে, হজ্জ করছে ব্যক্তিগতভাবে ইসলামের বিধান পালন করছে তাহলে কিভাবে আপনি শাসককে তাকফীর করার সাহস দেখান! শাসক তো জনগণের প্রতিচ্ছবি। যেমন জনগণ তেমন শাসক। আপনি জনগণকে পাল্টান শাসকও পাল্টে যাবে।

খাওয়ারেজদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল "হৃদয় যাচাই করা"।

শরীয়ত যাকে মুসলিম বলে স্বীকৃতি দিয়েছে, তাকে মুসলিম হিসেবে মেনে নেওয়া হল আহলে সুন্নাতে বৈশিষ্ট্য পক্ষান্তরে খাওয়ারেজদের বৈশিষ্ট্য হল "হৃদয় যাচাই করা "

যুদ্ধের মাঠে এক কাফির সৈনিক, অনেক মুসলিম সৈনিককে হত্যা করে। এক পর্যায়ে উসামা ইবনু যাইদ রাঃ উক্ত কাফির সৈনিকিকে আক্রমণ করেন। তিনি যখন তাকে হত্যা করতে উদ্যত হন তখন কাফির সৈনিক " لا اله الا الله" বলে। উসামা রাঃ সে অবস্থাতেই তাকে হত্যা করে। রাসুল ছাঃ উক্ত ঘটনা শুনে বিচলিত হয়ে উসামাকে বলেন,  তুমি কেন তাকে হত্যা করেছে? উসামা রাঃ বলেন, সে তরবারি ভয়ে "لا اله الا الله " বলেছে। রাসুল ছাঃ বলেন তুমি তার হৃদয় চিরে দেখেছ, সে ভয় বলেছে না স্বেচ্ছায় বলেছে?  (সহী মুসলিম ১/৯৬-৯৭)

অন্য এক হাদিছে রাসুল ছাঃ বলেন, "আমাকে নির্দেশ দেওয়া হয় নি যে,আমি মানুষের অন্তর খুঁজে দেখবো বা তাদের পেট ফেড়ে দেখবো।"

উক্ত হাদিছে স্পষ্ট যে,  কারো হৃদয় যাচাই করা আমাদের দায়িত্ব নয়।

আসুন দেখি,  স্বাভাবিক ভাবে মুসলিম কারাঃ

عن أنس بن مالك قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم ( من صلى صلاتنا واستقبل قبلتنا وأكل ذبيحتنا فذلك المسلم

হযরত আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-যে ব্যক্তি আমাদের মত নামায পড়ে, আমাদের কিবলাকেই কিবলা নির্ধারণ করে, এবং আমাদের জবাইকৃত পশু খায়, সে মুসলমান। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৩৮৪}

কাজেই উপরোক্ত শর্ত পূরণ হলে তাদের মুসলিম হিসেবে মেনে নিতে হবে। "যেহেতু সেহেতু"/ "হৃদয় যাচাই" করে মুসলিমকে কাফের বলা থেকে বিরত থাকুন।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.