Header Ads

Header ADS

এসো জান্নাতের দিকে

আজ আপনাদেরকে এমন কিছু হাদীস উপহার দিব যা আশা করি আমাদের সকলেরই কাম্য। কারণ স্বরূপ বলব। জান্নাতের কামণা করে না এমন কোন মুসলিম খুজে পাওয়া যাবে না। আর এ হাদীসগুলো জান্নাত পেতে হলে যে করণীয় আছে সে করণীয় সম্পর্কে। অনেক ক্ষেত্রে এমনও মুসলিম ভাই পাওয়া যায় যারা শুধুমাত্র জান্নাতের আকাঙ্খা রাখে, তবে তার কিছু করণীয় আছে সেটিও ভুলে থাকতে চান। আর কেউ যদি এ ধরণের দাবী রাখেন তা হলে বলা যাবে এটি মিথ্যা দাবীই মাত্র। কোন কিছু পেতে হলে কিছু করতে হয়। অনুরূপভাবে জান্নাত লাভ করতে হলে কিছু করণীয় আছে যা অবশ্যয় পালন করতেই হবে। সেগুলির মাঝে বেশ কিছু করণীয় হাদীস ভিত্তিক তুলে ধরলাম। আল্লাহ আমাদের সকলকে জান্নাত যেতে হলে যে কর্ম আছে সে কর্মগুলো সঠিক পন্থায় আদায় করার তৌফিক দিন। হে আল্লাহ! আমরা তোমার নিকট জান্নাতে ফিরদাউস কামনা করছি অতএব জান্নাতে ফিরদাউস যেতে হলে যে কথা ও কর্মের প্রয়োজন সে কথা ও কর্মগুলো আমাদের জন্য সহজ করে দাও। আমীন।
১. আপনি কি আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে চান?
 রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “বান্দা তার প্রতিপালকের সবচেয়ে নিকটবর্তী হয় সেজদারত অবস্থায় অতএব তোমরা সেজদারত অবস্থায় বেশী করে দোয়া কর”। (সহীহ মুসলিম)
২. আপনি কি একটি হজ্জের সওয়াব কামনা করেন?
 রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “রমযান মাসে ওমরাহ আদায় করা হজ্জের সমপরিমান সওয়াব” অন্য বর্ণনায় এসেছেঃ “আমার সাথে হজ্জ করার সমপরিমাণ সওয়াব”। (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)
৩. আপনি কি জান্নাতে একটি ঘর কামনা করেন?
 রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য একটি মসজিদ তৈরী করল আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে অনুরূপ একটি ঘর তৈরী করবেন”। (সহীহ মুসলিম)
৪. আপনি কি আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করেন?
 রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “নিশ্চয়ই আল্লাহ সন্তুষ্ট হন ঐ ব্যক্তির উপর যে ব্যক্তি কোন খাবার খেয়ে এবং কোন পানীয় পান করে আল্লাহর প্রশংসা করে”। (সহীহ মুসলিম)
৫. আপনি কি চান আপনার দোয়া কবুল বা আল্লাহর নিকট গ্রহণ হোক?
 রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে দোয়া ফিরিয়ে দেয়া হয় না”। (সুনানে আবু দাউদ)
৬. আপনি কি চান যে, আপনার জন্য পূর্ণ এক বৎসরের রোযার সওয়াব লেখা হোক?
 রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “প্রতি মাসে তিন দিন রোযা রাখা পূর্ণ এক বৎসরের যোরা সমপরিমাণ সওয়াব” (সহীহ বুখারী)
৭. আপনি পাহাড় পরিমান সওয়াব কামনা করেন?
 রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “যে ব্যক্তি অন্য কোন ব্যক্তির জানাযার নামায পড়া পর্যন্ত উপস্থিত থাকে তার জন্য এক ক্বিারাত সওয়াব, আর যে ব্যক্তি দাফন করা পর্যন্ত উপস্থিত থাকে তার জন্য দুই ক্বিারাত সওয়াব। জিজ্ঞাসা করা হল, দুই ক্বিরাত কি? বললেনঃ বড় দু’টি পাহাড়ের সমতূল্য। (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)
৮. আপনি জান্নাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে থাকতে চান?
 রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “আমি এবং ইয়াতীমের জামিনদার জান্নাতে এভাবে থাকব, এ সময় তিনি তাঁর হাতের মধ্যমা ও শাহাদাত (তর্জনী) অঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করলেন”। (সহীহ বুখারী)
৯. আপনি কি আল্লাহর মুজাহিাদের সওয়াব অথবা রোযাকারী বা রাত্রি জাগরণ করে নামায আদায়কারীর সওয়াব কামনা করেন?
 রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “বিধবা এবং মিসকীনদের উপকারার্থে যে ব্যক্তি প্রচেষ্ট করে তার প্রতিদান আল্লাহর পথে জিহাদকারীর অনুরূপ। বর্ণনাকারী বলেনঃ আমার মনে হয় তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “এবং অক্লান্তভাবে নামায আদায়কারীর মত ও সর্বদা রোযা আদায়কারীর মত সওয়াব”। (সহীহ বুখারী)
১০. আপনি কি চান যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই আপনার জন্য জান্নাতের জামিনদার বা দায়ীত্বশীল হোন?
 রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ যে ব্যত্তি আমাকে তার দুই চোয়ালের (মুখের) এবং দুই ঊরূর মধ্যবর্তী (লজ্বা) স্থানের নিশ্চয়তা দান করবে আমি নিজেই তার জান্নাতের জামিনদার হব”। (সহীহ বুখারী)
১১. আপনি কি চান যে, মৃত্যুর পরেও আপনার আমল বন্ধ না হোক?
 রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বলেনঃ “মানুষ যখন মারা যায় তখন তার সকল আমল বন্ধ হয়ে যায় তবে তিনটি আমল বন্ধ হয় না। ১. সাদকায়ে জারিয়া (স্থায়ী দান) ২. এমন জ্ঞান যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় ৩. সৎ সন্তান, যে তার জন্য দু’য়া করে”। (সহীহ মুসলিম)
১২. আপনি কি জান্নাতের ভান্ডারসমূহের মধ্য হতে কোন একটি ভান্ডার কামনা করেন?
 রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আব্দুল্লাহ বিন কায়েসকে বলেন, হে আব্দুল্লাহ বলঃ((لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ)) উচ্চারণঃ “লা হাওলা ওয়া লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহি” এটা হল, জান্নাতের ভান্ডারসমূহের মধ্যে একটি ভান্ডার”। (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)
১৩. আপনি কি সারা রাত্রি নামায আদায়ের প্রতিদান কামনা করেন?
 রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “যে ব্যক্তি এশার নামায জামাতের সাথে আদায় করে সে যেন অর্ধ রাত্রি দন্ডয়মান হয়ে নামায আদায় করল এবং যে ব্যক্তি ফজরের নামায জামাতের সাথে আদায় করল সে যেন সারা রাত নামায আদায় করল”। (সহীহ মুসলিম)
১৪. আপনি কি কয়েক মহুর্তে কোরআনের এক তৃতীয়াংশ পড়তে চান?
 রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “সূরা ইখলাস  ((قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ…) কোরআানের এক তৃতীয়াংশের সমপরিমাণ”। (সহীহ মুসলিম)
১৫. আপনি কি চান আপনার সওয়াবের পাল্লা ভারী হোক?
 রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “দুটি বাক্য আল্লাহর নিকট অতি প্রিয়, মুখে উচ্চারণ খুবই সহজ, কিয়ামতের দিন পাল্লায় খুবই ভারী হবে((سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ ، سُبْحَانَ اللَّهِ الْعَظِيمِ)) উচ্চারণঃ “সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহিী সুবহানাল্লাহিল আযীম”। (সহীহ বুখারী)
১৬. আপনি কি চান যে, আপনার রিযিক (আহার) প্রশস্ত হোক এবং হায়াত (আয়ু) বৃদ্ধি হোক?
 রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “যে ব্যক্তি তার রিযিক (আহার) প্রশস্ত হতে অথবা তার আয়ু বৃদ্ধি হতে আনন্দবোধ করে সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে”। (সহীহ বুখারী)
১৭. আপনি কি চান আল্লাহ আপনার সাথে সাক্ষাৎ করাকে পছন্দ করুন?
 রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ পছন্দ করে আল্লাহর তার সাক্ষাৎ পছন্দ করেন”। (সহীহ বুখারী)
১৮. আপনি কি আল্লাহর নিরাপত্তায় থাকতে চান?
 রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “যে ব্যক্তি ফজরের নামায (জামাত সহকারে) আদায় করে সে আল্লাহর দায়িত্বে থাকে”। (সহীহ মুসলিম)
১৯. আপনি কি কামনা করেন আপনার পাপসমূহ মার্জনা করা হোক তা যত বেশীই হোক না কেন?
 রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “যে ব্যক্তি দৈনিক একশত বার বলবে, উচ্চারণঃ “সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী”((سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ)) তার পাপগুরো মুছে দেয়া হবে যদিও তা সাগরের ফেনা সমতূল্যও হয়”। (সহীহ বুখারী)
২০. আপনি কি কামনা করেন যে, আপনার মাঝে ও জাহান্নামের আগুনের মাঝে সত্তর বছরের দূরত্ব সৃষ্টি হোক?
 রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে (জিহাদে গিয়ে) একদিন রোযা রাখবে আল্লাহ তার চেহারাকে জাহান্নামের আগুন হতে সত্তার বছরের দূরত্বে রাখবেন”। (সহীহ বুখারী)
২১. আপনি কি কামনা করেন যে, আল্লাহ আপনার উপর রহমত বর্ষণ করুন?
 রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “যে  ব্যক্তি আমার উপর একবার সালাত (দুরূদ) পাঠ করবে আল্লাহ এর কারণে তার উপর দশবার রহমত বর্ষণ করবেন”। (সহীহ মুসলিম)
২২. আপনি কি কামনা করেন যে, আল্লাহ আপনাকে মহিমাম্বিত করুন?
 রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “কোন ব্যক্তি যখন আল্লাহর জন্য বিনয়ী হয় তখন আল্লাহ তাকে সমুন্নত করেন ও তার মান-মর্যাদা বৃদ্ধি করেন”। (সহীহ মুসলিম)

লেখকঃ শাইখ ঈদ আল-আনাযি (আরবীতে)
ভাষান্তরেঃ মোহাম্মাদ মতিউল ইসলাম বিন আল আহমাদ
প্রকাশনায়ঃ রাওদা দা’ওয়া সেন্টার, রিয়াদ, সৌদি আরব।www.abdurrakib77.wordpress.com

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.