কেমন হবে জাহান্নাম
িেকেমন হবে জাহান্নাম?
কিছু পরিচিতিঃ
.
চির দুঃখ-কষ্ট-পেরেশানী, লাঞ্ছনা-গঞ্জনা,অপমান, বিড়ম্বনা, দুর্ভাগ্য, লজ্জা-শরম, ক্ষুধা-পিপাসা, আগুন, অশান্তি, হতাশ-নিরাশা, চীৎকার-কান্নাকাটি, শাস্তি, অভিশাপ, আযাব-গযব ও অসন্তোষের স্থান হলো জাহান্নাম।
.
শান্তিরলেশমাত্রই সেখানে নেই। হাত-পা ও ঘাড়-গলা
শিকলে বেঁধে বেড়ি পরিয়ে দলে দলে জাহান্নামের অতল গহবরে নিক্ষেপ করা হবে।যেখানে শুধু
অতিবেশি তেজ ও দাহ্য শক্তিসম্পন্ন আগুন ছাড়া
আর কিছু নেই।দোযখের অগ্নিশিখা তাদেরকে উপর, নীচ এবং ডান ও বাম থেকে স্পর্শ করবে, জ্বালাতে পোড়াতে থাকবে।
.
একবার চামড়া পুড়ে গেলে আবারো নুতন চামড়া গজাবে যেন বার বার আগুনের স্বাদ আস্বাদন করতে পারে। পিপাসায় প্রাণ পেটের নাড়ি-ভূঁমি গলে যাবে। এ হচ্ছে, আজাবের উপর আযাব। তাতে পিপাসা না কমে আরো তীব্র হবে।অতি দুর্গন্ধময় যাক্কুম এবং কাঁটাযুক্ত ঘাস ও গিসলিন হবে তাদের খাদ্য। ক্ষুধার তাড়নায় জ্বালায় তা ভক্ষণ করতে গেলে পেটের ভেতরে আরো যন্ত্রণা বাড়াবে। খাদ্য এবং পানীয় হবে আযাবের অন্যতম উপকরণ।
“তোমাদের দুনিয়ার আগুন, জাহান্নামের আগুনের
৭০ ভাগের ১ ভাগ। তাঁকে প্রশ্ন করা হলো, এটা
কি যথেষ্ট নয়? তিনি উত্তরে বলেন: এর সাথে
আরো ৬৯ গুন যোগ করা হবে এবং প্রত্যেকটির
গুণ এ আগুনের মতো।” (বুখারী, ৩২৬৫ ও মুসলিম,২৮৪৩)
.
আর তুমি কি জানো, জাহান্নাম কি? তা শান্তিতে
থাকতে দেয় না আবার ছেড়েও দেয় না। চামড়া
ঝলসে দেয়। উনিশজন ফেরেশতা তার প্রহরী
হবে।’’ (সূরা মুদ্দাসসির: ২৭-৩০)
.
“(জাহান্নামে) কাফেরের দাঁত হবে ওহোদ পাহাড়
সমান এবং চামড়ার ঘনত্ব হবে তিন দিনের পথের
দূরত্বের সমান।” (মুসলিম, ২৮৫১)
.
‘‘যখন তাদের দেহের চামড়া আগুনে পুড়ে পুড়ে গলে
যাবে, তখন (সাথে সাথে) সেখানে অন্য চামড়া
সৃষ্টি করে দেবো; যেনো তারা আজাবের স্বাদ
পুরোপুরি গ্রহণ করতে পারে। বস্তুত আল্লাহ
বড়োই শক্তিশালী এবং নিজের ফায়সালা সমূহ
কার্যকরী করার কৌশল খুব ভালো করেই
জানেন।’’ (সূরা নিসা: ৫৬)
.
সে (জাহান্নামে) মরবেও না আবার জীবিতও থাকবে না।’’ (সূরা আ’লা: ১৩)
.
“আর গলিত পুঁজ পান করানো হবে যা সে
অতিকষ্টে গলধ:করণ করবে এবং তা গলধ:করণ
প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। চতুর্দিক থেকে মৃত্যু
যন্ত্রণা তাকে গ্রাস করে নেবে কিন্তু তবুও তার
মৃত্যু হবে না।’’ (সূরা ইব্রাহীম: ১৬-১৭)
.
‘‘তারা (জাহান্নামীরা) যখন সেখানে নিক্ষিপ্ত হবে, তখন তার ক্ষিপ্রতার তর্জন-গর্জন শুনতে পাবে এবং তা উত্থাল-পাতাল করতে থাকবে,ক্রোধ আক্রোশে এমন অবস্থা ধারণ করবে, মনে হবে তা গোস্বায় ফেটে পড়বে।’’ (সূরা মুলক:৭-৮)
.
জাহান্নাম যখন দূর হতে তাদেরকে (জাহান্নামীদের)দেখতে পাবে তখন তারা তার ক্রোধ ও তেজস্বী আওয়াজ (অর্থাৎ তর্জন-গর্জন) শুনতে পাবে। আর যখন তাদেরকে হাত-পা বাধা অবস্থায় জাহান্নামের কোন সংকীর্ণ স্থানে নিক্ষেপ করা হবে তখন তারা সেখানে কেবল মৃত্যুকে ডাকতে থাকবে।’’ (সূরা ফুরকান: ১২-১৩)
.
‘নিশ্চয় জাহান্নাম একটি ঘাঁটি। আল্লাহদ্রোহীদের জন্য আশ্রয়স্থল। সেখানে তারা যুগ যুগ ধরে অবস্থান করবে।’’ (সূরা নাবা: ২১-২৩)
.
‘জাহান্নামের সাতটি দরজা (স্তর) আছে।প্রত্যেকটি দরজার জন্য ভিন্ন ভিন্ন দল নির্ধারিত হয়েছে।’’ (সূরা আল-হিজর: ৪)
.
অর্থাৎ জাহান্নাম হচ্ছে পরলোকের এমন একটি
বিশাল এলাকা যেখানে বিভিন্ন ধরনের শাস্তির
জন্য ভিন্ন ভিন্ন এলাকা নির্ধারিত আছে।
সেগুলোকে প্রধানত: সাত ভাগে ভাগ করা হয়েছে:
যথা:
1) হাবিয়া। 2) জাহীম। 3) সাকার। 4) লাযা। 5)
সাঈর। 6) হুতামাহ্ । 7) জাহান্নাম।
.
গাছ্ছাক: একটি হ্রদ। যা জাহান্নামীগণের রক্ত,
ঘাম ও পুঁজ ইত্যাদি প্রবাহিত হয়ে সেখানে জমা
হবে।
গিছলিন: এটা হচ্ছে জাহান্নামীদের মল-মুত্র জমা
হওয়ার স্থান। জাহান্নামীরা যখন খুব ক্ষুধা-তৃষ্ণা
অনুভব করবে তখন উপরোক্ত দু’জায়গা হতে
পানাহার করতে দেয়া হবে। তাছাড়া ‘তীনাতুল
খাবাল’’ নামক বিষ ও পুঁজে পরিপূর্ণ আরেকটি
কুপের কথাও হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।
‘যে সব লোক তাদের রবকে অস্বীকার ও অমান্য
করেছে, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নাম। তা
আবাসস্থল হিসেবে অত্যন্ত খারাপ
জায়গা।’’ (সূরা মূলক: ৬)
.
‘যারা কুফুরী করেছে এবং কাফের অবস্থাই মৃত্যুবরণ করেছে তাদের উপর আল্লাহর,ফেরেশতাদের ও সমস্ত মানুষের লা‘নত। এ অবস্থায় তারা (জাহান্নামে) অনন্তকাল অবস্থান করবে। তাদের শাস্তি কমানো হবে না অথবা অন্য কোন অবকাশ দেয়া হবে না।’’ (সূরা আল-বাকারা:১৬১-১৬২)
.
‘‘আমরা কাফেরদের(আল্লাহ ও রাসূলের
অস্বীকারকারী) জন্য শিকল, কণ্ঠকড়া ও দাউ দাউ করে জ্বলা আগুন প্রস্তুত করে রেখেছি।’’ (সূরা দাহর:৪)
.
যারা আমার আয়াতগুলোকে মিথ্যা মনে করে অস্বীকার করেছে এবং বিদ্রোহীর ভূমিকা অবলম্বন করেছে, তাদের জন্য আসমানের দরজা কখনো খোলা হবে না। তাদের জান্নাতে প্রবেশ করা ততোখানি অসম্ভব যতোখানি অসম্ভব সূচের ছিদ্রের ভেতন দিয়ে উষ্ট্র প্রবেশ। অপরাধীদের জন্য প্রতিফলন এমন হওয়াই উচিত। তাদের জন্য আগুনের শয্যা ও চাদর নির্দিষ্ট আছে।’’ (সূরা আ‘রাফ: ৪০-৪১)
.
জাহান্নাম সেই ব্যক্তিকে আহবান করবে, যে সত্য ও সুন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো এবং তা থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলো। আর যে ধন-সম্পদ (আল্লাহর পথে ব্যয় না করে) জমা করতো এবং তা আকঁড়ে ধরে থাকতো।’’ (সূরা মা‘আরিজ:১৭-১৮)।
.
(জাহান্নামীদের বলা হবে) চলো, সে ছায়ার দিকে যা
তিনটি শাখা বিশিষ্ট। যেখানে না (শীতল) ছায়া
আছে আর না আগুনের লেলিহান শিখা হতে
রক্ষাকারী কোন বস্তু। সে আগুন প্রাসাদের ন্যায়
বিরাট স্ফুলিঙ্গ নিক্ষেপ করবে। তা এমনভাবে
লাফাতে থাকবে, দেখলে মনে হবে যেন হলুদ বর্ণের
উট।’’ (সূরা মুরসালাত: ৩০-৩৩)
.
‘আর খোদাদ্রোহী লোকদের নিকৃষ্ট পরিণতি হচ্ছে
জাহান্নাম। সেখানে তারা (অনন্তকাল) জ্বলবে।
এটা অত্যন্ত খারাপ স্থান। প্রকৃতপক্ষে এ তাদের
জন্যেই। অতএব সেখানে তারা স্বাধ গ্রহণ করবে
টগবগ করা ফুটন্ত পানি, পুঁজ, রক্ত এবং এ ধরনের
আরো অনেক কষ্টের।’’ (সূরা সাদ: ৫৫-৫৮)
.
তাদের (জাহান্নামীদের)মাথার উপরে তীব্র গরম
পানি ঢেলে দেয়া হবে, ফলে তাদের পেটের মধ্যে
অবস্থিত সকল বস্তু ও চামড়া (সাথে সাথে) গলে
যাবে এবং তাদের জন্য লোহার ডান্ডা থাকবে।
যখনই তারা স্বাসবোধন অবস্থান জাহান্নাম হতে
বের হবার চেষ্টা করবে তখনই তাদেরকে প্রতিহত
করা হবে এবং বলা হবে দহনের শাস্তি ভোগ করতে
থাক।’’ (সূরা হজ্জ: ১৯-২২)
.
“তার সামনে দোযখ রয়েছে। তাতে পুজ ও রক্ত
মিশ্রিত পানি পান করানো হবে। ঢোক গিলে তা
পান করবে এবং গলার ভেতরে প্রবেশ করাতে কমই
পারবে।” (সূরা ইব্রাহীম: ১৬-১৭)
‘নিশ্চয়ই যাক্কুম বৃক্ষ পাপীর খাদ্য হবে। গলিত
তামার মতো পেটে ফুটতে থাকবে। যেমন পাটি
ফুটে। একে ধর এবং টেনে নিয়ে যাও জাহান্নামের
মধ্যস্থলে। তারপর তার মাথার উপর ফুটন্ত পানির
আযাব ঢেলে দাও।(সূরা দোখান: ৪৩-৪৮)
.
‘‘অবশ্যই তারা যাক্কুম গাছের খাদ্য খাবে।ওগুলোর দ্বারাই পেট ভর্তি করবে। আর উপর হতে টগবগ করে ফুটন্ত পানি পিপাসা কাতর উটের ন্যায় পান করবে।’’ (সূরা ওয়াকি‘আহ্: ৫২-৫৩)
.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন:“যদি যাক্কুমের এক বিন্দু পৃথিবীতে পড়ে তবে তা সারা বিশ্বের প্রাণীকুলের আহার্য বস্তুকে বিকৃত
করে ফেলবে।’’ (মুসনাদে আহমাদ: ১/৩০০)
.
‘‘তারা পানির আকাংখা করলে গলিত ধাতুর ন্যায়
পানি সরবরাহ করা হবে। যা তাদের মুখমন্ডলকে
ঝলসে দেবে। এটা কতো নিকৃষ্ট পানীয় এবং
জাহান্নাম কতোই না নিকৃষ্ট স্থান।’’ (সূরা কাহারু:১৯)
.
‘‘সে পানি পান করা মাত্র) তা তাদের নাড়ি ভূড়িকে
ছিন্ন ভিন্ন করে দেবে।’’ (সূরা মুহাম্মদ: ১৫)
.
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘যদি সেই দুর্গন্ধময় পুজ এক বালতি পৃথিবীতে ফেলে দেয়া হতো তবে তা গোটা পৃথিবীকে দুর্গন্ধ অতিষ্ঠ করে
তুলতো।’’ (তিরমিযি, ২৫৮৪; মুসনাদেতআহমাদ,৩/২৮)
.
জাহান্নামবাসীরা কাঁদতে থাকবে। তাদের চোখের পানিতে জাহাজ ভাসাতে চাইলে ভাসানো যাবে।তাদের চোখ থেকে অশ্রুর বদলে রক্ত বেরুবে।[হাকেম (৪/৬৪৮), হাদীসের সনদ সহীহ, আল্লামা যাহাবী ও আলবানী একে সহীহ হাদীস বলেছেন]
.
“তুমি ঐ দিন পাপীদেরকে পরস্পরে শৃঙ্খলাবদ্ধ
দেখবে। তাদের জামা হবে দাহ্য আলকাতরার এবং
তাদের মুখমন্ডলকে আগুন আচ্ছন্ন করে ফেলবে।” (সূরা ইব্রাহীম: ৪৯-৫০)
.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন: ‘‘আমি জান্নাতের গেটে দাঁড়িয়ে দেখলাম,
এর অধিকাংশ অধিবাসী গরীব-মিসকীন।
জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করানোর পর
আমি জাহান্নামের গেটে দাঁড়িয়ে দেখলাম, তাদের
অধিকাংশই নারী এবং ধনীরা আটকা
পড়েছে।’ (বুখারী, ৩২৪১ ও মুসলিম, ২৭৩৭)
-
কোন মন্তব্য নেই