Header Ads

Header ADS

গান শোনা কেন হারাম হবে?

ক্লাস নাইনে পড়ার সময়, এক উস্তাদের কাছে যেতাম গীটার শিখতে। তখন ধর্মের কোন ভাবনা ছিলনা। তাই মিউজিক হারাম কি না, এ নিয়ে কোন মাথাব্যথাও ছিলনা। তবু একদিন এক সহপাঠী জিজ্ঞেস করে বসলো উস্তাদকে, “ভাইয়া, আচ্ছা মিউজিক কি হারাম ?” উনি উত্তরে যা বলেছিলেন তা মনে আছে এখনও -

“আসলে মিউজিক দুই প্রকার । একটা হল এমন যা প্রেমকে প্রমোট করে। আরেকটা সেক্সুয়ালিটি কে। সেক্সুয়ালিটিকে প্রমোট করা মিউজিক শেখা যাবেনা । তবে প্রেমকে প্রমোট করা মিউজিক ওকে”।

ওনার ভাষায় কামবাচক মিউজিক ছিল মেটাল বা হেভি মেটালগুলো। আমার ইন্টারেস্টের মূল বিষয় ছিল ক্লাসিকাল গিটার, যা যারা শুনেছেন, তারা এর বিমোহিত করার ক্ষমতা জানেন। আমার উস্তাদের লজিক খুব সুন্দর ছিল । উনি এর সাথে আরও কিছু প্রমাণ দিয়েছিলেন। যেমন ক্রীশ্চান চার্চের ফাদারদের মিউজিক চর্চা । আমার জানামতে নটরডেমের প্রাক্তন প্রিন্সিপাল, মিউজিকের বস ইন্সট্রমেন্ট, পিয়ানোর বস । আমি নটরডেমে ভর্তি হবার কথা শুনে, উস্তাদ, ক্লাসিকাল গীটারের জন্য ইন্দোনেশিয়ান এক ফাদারের কাছে যেতে বলেছিলেন। মগবাজার চার্চে ।

লজিক দিয়ে ইসলামি ফিকহ ডেভেলপ হয়নি । কিন্তু ফিতরাত বলে মানুষের ভিতর একটি বিষয় আল্লাহ্‌, সৃষ্টির সময় বিল্ট ইন হিসেবে দিয়েছেন, যা দিয়ে সে ভালো মন্দ বুঝতে পারে । আমি ইসলামি ফিকহের ছাত্র নই । তাই সাধারণ মানুষ হিসেবে কিছু কথা তুলে ধরাই নিজের কর্তব্য ভেবেছি ।

আমাদের প্রজন্মে সবচাইতে প্রচলিত হল হিন্দি গান। না বুঝে হিন্দি গানের মাধ্যমে আমরা যে কত নিকৃষ্ট কালিমা উচ্চারণ করি, সে প্রসঙ্গে একটু পরে আসছি । টি এস সির ঘটনার পরে একটি গান জনপ্রিয়তা পেয়েছিল ফেসবুকে...

“মেলায় যাইরে ... ... বখাটে ছেলের ভিড়ে ললনাদের রেহাই নাই”
এই গান গুলোর কথা কি একবারও ভেবে দেখেছেন? “চুমকি চলেছে একা পথে, সঙ্গী হলে দোষ কি তাতে?”
কিংবা জেমসের বিখ্যাত প্রথম স্পর্শ বা মীরাবাঈ গানের কথাগুলো?
বাঈ মানে আমার জানামতে বাঈজি; মানে যে নারী নেচে গেয়ে দরবারের মানুষের মনোরঞ্জন করে । তো এই গানের প্রথম লাইন হল “ঝাকানাকা ঝাকানাকা ঝাকানাকা দেহ, দোলা না”
এই গানটি চলচ্চিত্রে যখন নেওয়া হল, জেমস তখন অভিযোগ করলেন, শাবনূরের খোলামেলা নাচ নাকি তার গানের সম্মান নষ্ট করেছে । হাসবো না কাঁদবো ভেবে পাইনা ।

হিন্দি গানে প্রচলিত আছে শিরকে আকবারের মত বিষয় , যা একজনকে ইসলাম থেকে টেনে বের করে, চিরস্থায়ী জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত করতে পারে ।
২০১২ এর ডিসেম্বরে মুগদায় থাকতাম । পাশেই ছিল বাচ্চাদের স্কুল । তারা সম্ভবত ১৬ ডিসেম্বর উদযাপনের অনুষ্ঠানে একটি গান বাজাচ্ছিল । হিন্দি ছবির নাম রাওড়ি রাথোড় । গানটিতে একজন মহিলা বলছে,

“আয় রে, প্রেমিক আমার । বন্দুকে আমার আর গুলি নেই রে।
আয় রে প্রেমিক আমার, সব আগুন এখন তো ব্লাউজে রে।
ওড়নারই নিচে লুকিয়ে রেখেছি, উঠালে যদি হাঙ্গামা হয় ।
ওড়নারই নিচে দাবিয়ে রেখেছি, উঠালে যদি হাঙ্গামা হয়”।

কথাগুলো লিখতে ঘেন্না হচ্ছে শরীরে । কিন্তু সেদিন নার্সারী থেকে দশম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীরা, এই গানের তালে তালে তাদের টিচারদের সাথে নেচেছিল ঘন্টাব্যাপী। এসব কথা, যদি কোন মেয়ে আমাদের সমাজে বলে, আমরা তার পেশা সম্পর্কে কোন সন্দেহ পোষণ করিনা । অথচ, কোন এক গায়ে হলুদের ডিজে পার্টিতে, আমাদের মা-বোনেরাও এই গান গাচ্ছেন । ড্রইংরুমে বসে বাঈদের নাচ দেখাটাই যে সভ্য মানুষের কালচার !!!

“চোলি কা পিছে কেয়া হ্যায়” গানটা অনেকেই শুনেছেন ।
নায়কঃ “ওড়নার পিছে কী তোর, ওড়নার পিছে?”
নায়িকা “ওড়নাতে হৃদয় আমার, ওড়নাতে হৃদয় আমার, আর কী। আর কী !!!”
কথাগুলো লিখতে গেলেও কান গরম হয়ে যায় । আঊযুবিল্লাহ ।

এক পাকিস্তানী গায়ক আমার খুব পছন্দের ছিল । তার একটি প্রেমের গান একদিন মনে মনে গাচ্ছিলাম । প্রেমিকাকে উদ্দেশ্য করে গাওয়া, গানের এই লাইনে এসে থেমে গেলাম ।
“তুঝকো ছুলু (তোকে স্পর্শ করি) তুঝকো পূজাও (তোর পূজা করি )”
এতো গেল উন্মত্ত ব্যভিচারের আহ্বান আর ছোটখাটো শিরকি কথাবার্তা । এবার খুব জনপ্রিয় একটি গানে ডাহা শিরক দেখাই।

“তুঝমে রাব দিখতা হ্যায়, ইয়ারা মে কেয়া কারু”
নায়ক তাঁর প্রেমিকাকে বলছেন,
“তোর ভিতরে আমি আমার রবকে দেখি,
ইয়ার, আমার কী দোষ”

এর পরের লাইন শোনেন।
“সেজদায় মাথা ঝুঁকে যায়, ইয়ার, আমার কী দোষ”

প্রিয় ভাইয়া/আপু, এই কথাগুলো আপনার সামনে কেও বললে, আপনি তাকে সতর্ক করবেন আপনি যেমন মুসলিমই হন না কেন । কিন্তু শয়তান ও তার জুনূদ, আপনাকে মিউজিকের তালে এতখানি ভুলিয়ে রাখে, যে আপনি এই গান দিনে হাজারবার শুনলেও কোন প্রতিক্রিয়া হয়না ।

আমার গীটারের উস্তাদের মতই, এই সমাজে মিউজিক চর্চা নিয়ে বহু মিথ বা রূপকথার গল্প প্রচলিত আছে । কেও কেও বলে, রসূল সল্লাল্লহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময় মিউজিক ছিলনা । ইন্সট্রুমেন্ট ছিল শুধু দাফ, যা উনি বিয়েশাদীতে বাজানোর অনুমতি দিয়েছেন । আর কোন ইন্সট্রুমেন্ট থাকলে সেটাও তিনি অনুমতি দিতেন । ওয়াল্লাহি, তারা মিথ্যে বলে । অথবা এমন কথা বলে, যে বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞান নেই ।

“আর মানুষদের মধ্যে সে কি অযথা সময়কে ক্রয় করে, যা তাকে আল্লাহ্‌র পথ ব্যতীত অন্যত্র ধাবিত করে?” –সূরা লুকমান-৬
আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রদিইয়াল্লাহু আনহু এই আয়াতের “অযথা সময়ের” তাফসীর করেছেন “গান-বাজনা” । ইবন আব্বাস হলেন এই জাতির তাফসীরের বস, যিনি তাফসীর খেয়াল খুশি মত করতেন না; আল্লাহ্‌র রসূলের একজন সাহাবী ছিলেন ।
“আমার উম্মতের মধ্যে কিছু লোক থাকবে, যারা ব্যভিচার, সিল্ক, মদ আর বাদ্যযন্ত্রের অনুমোদন দেবে”- কতই না সত্যি আল্লাহর রসূল সল্লাল্লহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভবিষ্যদ্বাণী । যদি মিউজিক হারাম না হত, তাহলে মদ আর লাম্পট্যের সাথে কেন এই কথা উচ্চারিত হল ?

ফ্রিমেসনদের ইতিহাস পড়েছেন ? এদের মূলনীতি হল, আল্লাহ্‌র মাটিতে মানুষের আইনকে প্রতিষ্ঠা করা । এদের সিম্বল হল একচোখ, যা কিনা দাজ্জালেরও প্রতীক । এরা একটি সম্প্রদায় । নিজের সম্প্রদায়ের লোককে বাঁচানোর জন্য এরা সব করতে প্রস্তুত । খুন করে কোন ফ্রি মেসন যদি কাঠগড়া থেকে বিচারককে একটি সিগ্নাল দিয়ে বুঝায় যে সে ফ্রি মেসন, আর বিচারক যদি ফ্রি হয়, তাহলে সে কোন সাজা পাবেনা । ফ্রি মেসনদের ইতিহাস অনেক প্রাচীন । সম্ভবত সুলাইমান ‘আলাইহিস সালামের যুগ থেকে এরা এই পৃথিবীতে আসে অর্থাৎ প্রায় তিন হাজার বছর । যদিও কালের বিবর্তনে এদের অনেক পরিবর্তন হয়েছে । তবুও বেসিক এক, আর তা হল আল্লাহ্‌র আইনকে প্রতিস্থাপিত করা । এদের একটি বাইবেল আছে যার নাম ‘শয়তানের বাইবেল’ ।

প্রশ্ন হল কেন, মিউজিক হারাম কিনা এই আলোচনায় ফ্রি মেসনদেরর কথা লিখছি? কারণ বহু মিউজিক কিংবদন্তি হল ফ্রিমেসন । মাইকেল জ্যাক্সনের একটি এলবামের প্রচ্ছদে ফ্রি মেসনদের প্রতীক এক চোখ ব্যবহার করা হয় । ম্যাডোনার একটি বিখ্যাত গান হল “লাইক এ প্রেয়ার” এই গানের মিউজিক ভিডিওতে ম্যাডনা একটি বইয়ের উপর দাঁড়িয়ে পোজ দেয় । পরে জুম করে দেখা যায় বইয়ের লেখাগুলো আরবী । ফ্রি মেসনরা কী করে তাদের গানে? এরা গানের ভিতরে ব্যাকট্র্যাকিং করে সেখানে শয়তানের পূজার শ্লোক ঢুকিয়ে দেয় । যেমন ম্যাডোনা তার ‘Like a prayer’ গানে করে । গানটি ব্যাকওয়ার্ডে বা পিছন থেকে সামনে শুনলে, শয়তানকে ডাকার প্রমাণ পাওয়া যায় । আর ফরোয়ারডে শুনলে, ঐ শয়তানের প্রার্থনার অংশ, আপনার অবচেতন মনে আল্লাহ্‌র অস্তিত্বের সম্পর্কে প্রশ্ন জাগাবে, আখিরাত ও আল্লাহ্‌র আইনের প্রতি অশ্রদ্ধার জন্ম দেবে । এটাই ম্যাডোনার বা EAGLES ব্যান্ডের Hotel California গানের চাওয়া । প্রসঙ্গত, হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া কোন হোটেল নয়, বরং চার্চের রাস্তার নাম । এই চার্চটি খ্রিষ্টান চার্চ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও পরে, চার্চের মেসনিক কার্যক্রমের জন্য, পরে ক্রীশ্চানরা এর দায় অস্বীকার করে ।

প্রিয় ভাইয়া/আপু, এই দীর্ঘ নোটের একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে গেছি । ধৈর্য নিয়ে পড়বার জন্য ধন্যবাদ দিচ্ছি । আল্লাহ্‌ তার বান্দাদের কষ্ট চান না । পরীক্ষা করতে চান কারা উত্তম । আল্লাহ্‌ মানুষের ফিতরাতের ভিতরে গানের প্রতি ভালোবাসা তৈরি করে দিয়েছেন । তাই গান হারাম নয় । তবে সেই গান হতে হবে মিউজিক মুক্ত। বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্ককে প্রমোট করেনা । কোন পাপ বা গুনাহের কাজে উৎসাহ দেয় না। মিউজিককে শান্তির কিংবা পবিত্রতার মনে হলেও আদতে তা নয় । আপনি হয়ত সলাত পড়তে চাচ্ছেন, কিন্তু পারছেন না । ফজরে কিছুতেই উঠতে পারছেন না, যত চেষ্টাই করছেন । কিন্তু কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না । মিউজিক যদি সত্যিই শান্তি নিয়ে আসতো, তাহলে মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিগুলোতে মাদক, ব্যভিচার আর আত্মহত্যার হার এত বেশি হত না । মিউজিক আপনার অবচেতন মনে শয়তানের প্রতি ভালোবাসা তৈরি করে। মৃত্যু হল সেই সময়, যখন শয়তান তার সর্বশক্তি নিয়োগ করে, যাতে আপনি আল্লাহ্‌র প্রতি সন্দেহ পোষণ করেন, তার প্রতি অসন্তুষ্ট হন, আর চিরস্থায়ী জাহান্নামের আগুনে পতিত হন। নাঊযুবিল্লাহ।

ফুটনোটঃ মুম্বাইয়ের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির একজনের উদাহরণ দিয়ে অনেকেই ভাবেন, “উনিও তো মুসলিম । নামাযীও শোনা যায় ।“
উনি হিন্দু থেকে ইসলামে আসেন, আলহামদুলিল্লাহ্‌। কিন্তু সুফিবাদের আদর্শ তাঁকে এই গুনাহের কাজকে উপলব্ধি করতে দিচ্ছেনা হয়তোবা । আপনি কি অন্য কোন মুসলিমের কাজকে দলিল হিসেবে গ্রহণ করতে চান, যেখানে আল্লাহ্‌ সুবাহানাহু ওয়া তায়ালা ও তাঁর রসূল সল্লাল্লহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনাকে স্পষ্ট সতর্ক করেছেন? ঐ গায়ক, তাঁর হিসাব তাঁর রবের কাছে দেবেন । আমরা তাঁর জন্য দুয়া করি।

যিনি তাঁকে শিরক থেকে তাওহীদের পতাকাতলে এনেছেন, তিনিই যেন তাঁকে এই গুনাহ থেকে বের হয়ে আসার তৌফিক দেন।

অজ্ঞতাঃ ইদানিংকালের ইসলামিক টিভিচ্যানেল আর ইসলামী নাশিদে যে মিউজিক থাকে সেগুলো হালাল কিনা জানিনা । তবে কিছু নাশিদে হারাম মিউজিক আছে যা সম্পূর্ণ হারাম। মিউজিকাল ইন্সট্রুমেন্ট থেকে পাখির আওয়াজ বের করলে তা কী করে হালাল হয়, আমার বুঝে আসেনা। Allaah knows best...

আল’হামদুলিল্লাহ..

আল্লাহুম্মা ইন্নী নাঊযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহিয়া ওয়াল মামাত (আল্লাহ, আপনি জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে আমাদের রক্ষা করুন।

ইবলিস্ দ্বারা উদ্ভাবিত মিউজিক ও তার সকল অনিষ্ট থেকে দূরে রাখুন...

[নিজের জাহেলী অতীতের কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা এবং বর্তমানে দ্বীনের পথে চলার প্রশান্তিময়তা নিয়ে লিখেছেন - Salman Saeed]

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.