লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে কি অযু ভঙ্গ হবে??
#সংশয়_নিরশনঃ 'পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করলে উযু করতে হবে? নাকি হবে না?'একটি তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
♦লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে উযু করতে হবে না- এ মর্মে বর্ণিত হাদীসসমূহঃ
.
(১) ক্বায়স ইবনু ত্বালক্ব ইবনু আলী বর্ণিত হাদীসঃ তিনি বলেন, আমি আমার লজ্জাস্থান স্পর্শ করেছি অথবা বলেছেন, কোনো ব্যক্তি সালাতরত অবস্থায় স্বীয় লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে তার উপর উযু ওয়াজিব হবে কি? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না, এটা তো তোমার শরীরের একটি টুকরা মাত্র।’’
.
হাদীসটির চারটি সূত্রে রয়েছেঃ প্রথম সূত্রঃ ইবনু মাজাহ বাদে অন্যান্য সুনান সংকলগণ বর্ণনা করেছেন, মুলাযিম ইবনু আমর ও আবদুল্লাহ ইবনু বাদর থেকে ক্বায়স ইবনু ত্বালক্ব আলী থেকে তার পিতা সূত্রে মারফূভাবে...।
.
ইমাম তিরমিযী বলেন, এ অনুচ্ছেদে আবূ উমামাহ থেকে বর্ণিত হাদীসও রয়েছে। হাদীসটির এক সূত্রে আইয়ূব ইবনু উতবাহ ও মুহাম্মাদ ইবনু জাবির রয়েছে। আইয়ূব ও মুহাম্মাদ সম্পর্কে কতিপয় মুহাদ্দিসীনে কিরাম সমালোচনা করেছেন। অতএব মুলাযিম ইবনু আমরের হাদীসটিই অধিকতর সহীহ এবং উত্তম।
.
ইমাম বায়হাক্বী সুনানুল কুবরাতে বলেনঃ সনদের এই মুলাযিম ইবনু আমরের ব্যাপারে আপত্তি রয়েছে।
.
দ্বিতীয় সূত্রঃ যা বর্ণনা করেছেন ইবনু মাজাহ মুহাম্মাদ ইবনু জাবির থেকে ক্বায়স ইবনু ত্বালক্ব থেকে। সনদে মুহাম্মাদ ইবনু জাবির দুর্বল।
ফাল্লাস বলেনঃ তিনি মাতরূক। ইবনু মাঈন বলেন, তিনি কিছুই না।
.
তৃতীয় সূত্রঃ আব্দুল হামীদ ইবনু জা‘ফার থেকে আইয়ূব ইবনু মুহাম্মাদ আল-আজালী থেকে ক্বায়স ইবনু ত্বালক্ব সূত্রে। এটি ইবনু আদীতে রয়েছে। সনদের আব্দুল হামীদকে সাওরী, আজলী ও ইবনু মাঈন দুর্বল বলেছেন।
.
চতুর্থ সূত্রঃ আইয়ূব ইবনু উতবাহ আল ইয়ামানী থেকে ক্বায়স ইবনু ত্বালক্ব থেকে তার পিতা সূত্রে। এটি বর্ণনা করেছেন আহমাদ।
ইবনু মাঈন বলেনঃ আইয়ূব ইবনু উতবাহ কিছুই না।
ইমাম নাসায়ী বলেনঃ তিনি মুযতারিবুল হাদীস।
আলোচ্য হাদীসের প্রথম সূত্রটি সম্পর্কে ত্বাহাভী ‘শারহু মাআনিল আসার’ গ্রন্থে বলেনঃ এ হাদীসের সানাদ মুস্তাকিম, এর সানাদ ও মাতান মুযতারিব নয়। তিনি আলী ইবনুল মাদীনী সূত্রে বর্ণনা করেন যে, এ হাদীসখানা আমার নিকট বুসরাহর হাদীসের তুলনায় উত্তম।’
.
ইমাম বায়হাক্বী বলেন, হাদীসটি ইকরিমা ইবনু ‘আম্মার ও ত্বালক্ব থেকে মুরসালভাবে বর্ণনা করেছেন। ইকরিমাহ ইবনু ‘আম্মারের তা‘দীল নিয়ে সমালোচনা আছে।
.
ইয়াহইয়া ইবনু কাত্তান ও আহমাদ ইবনু হাম্বাল তাকে কটাক্ষ করেছেন। আর ইমাম বুখারী বলেছেন, তিনি খুবই দুর্বল।
.
উল্লেখ্য ত্বালক্ব ইবুন আলীর হাদীসকে ইমাম ত্বাবারানী, ইবনু হিব্বান, ফাল্লাস ও ইবনু হাযম সহীহ বলেছেন।
.
কিন্তু ইমাম ত্বাবারানী, ইবনু হিব্বান, ইবনুল ‘আরাবী, হাযিমী ও অন্যরা বলেছেন যে, ত্বালক্ব ইবনু আলীর হাদীসটি মানসূখ হয়ে গেছে।
.
অন্যদিকে ত্বালক্ব ইবনু আলীর হাদীসকে যারা দুর্বল বলে আখ্যায়িত করেছেন তারা হলেন ইমাম শাফিঈ, আবূ হাতিম, আবূ যুর‘আহ, ইমাম বায়হাক্বী, ইবনুল জাওযী এবং আরো অনেকে।
.
ইয়াহইয়াহ ইবনু মাঈন বলেনঃ আমি আমার পিতা এবং আবূ যুরআহকে ক্বায়স বর্ণিত এ হাদীস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তারা বলেনঃ ক্বায়স ইবনু ত্বালক্ব ঐ লোকদের অন্তর্ভুক্ত নন যাদের দ্বারা দলীল প্রতিষ্ঠিত হয়। তারা উভয়ে তাকে সন্দেহ করেন এবং প্রমাণযোগ্য মনে করেন না।
.
(২) জা‘ফার ইবনু যুবায়র থেকে কাসিম থেকে আবূ উমামাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিতঃ এক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করলেন, আমি সালাতরত অবস্থায় আমার জননেন্দ্রীয় স্পর্শ করেছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কোনো অসুবিধা নেই। সেটা তো তোমার শরীরের একটি টুকরা মাত্র। (ইবনু মাজাহ, হাঃ ৪৮৪।
.
হাদীসটি দুর্বল।
.
ইমাম বুখারী, ইমাম নাসায়ী ও ইমাম দারাকুতনী বলেনঃ সনদের জা‘ফার মাতরূক এবং কাসিম দুর্বল।
.
(৩) ফাযল ইবনু মুখতার থেকে, তিনি উবাইদুল্লাহ ইবনু মুয়াহ্হাব থেকে উসমাহ ইবনু মালিক আর-খিতমী (রাঃ) সূত্রে বর্ণনা করেনঃ এক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমি সালাতে চুলকাচ্ছিলাম, এক পর্যায়ে আমার হাত আমার লজ্জাস্থানে লেগে যায়। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমিও এরূপ করে থাকি। (দারাকুতনী, হাদীসটি দুর্বল।
.
ইবনু আদী বলেনঃ সনদের ফাযল ইবনু মুখতার বর্ণিত হাদীসাবলী মুনকার।
.
আবূ হাতিম বলেনঃ তিনি মাজহুল, তার বর্ণিত হাদীস মুনকার। তিনি বাতিল হাদীসাবলী বর্ণনা করেন)
.
এছাড়াও এ মতের পক্ষে কতিপয় সাহাব থেকে কিছু আসার বর্ণিত আছে। তারা হলেন, আলী, ইবনু মাসঊদ, আম্মার ইবনু ইয়াসার, ইমরান ইবনুল হুসাইন, হুযাইফাহ, সা‘দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাসের এক রিওয়ায়াত, ইবনু আব্বাসের এক রিওয়ায়াত এবং আবূ দারদা (রাঃ) বর্ণিত আসার।
.
এ মতের পক্ষে রয়েছে সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিবের এক রিওয়ায়াত, সাঈদ ইবনু যুবায়র, ইবরাহীম নাখঈ, রবী‘আহ, সুফিয়ান সাওরী, আবূ হানীফাহ ও তার সাথীবর্গ এবং কূফাবাসী। কিন্তু অধিকাংশ সাহাবায়ি কিরাম, তাবেঈন ও ইমামগণ-এর বিপরীত মত পোষণ করেছেন।
.
অর্থাৎ জমহুর উলামায়ি কিরাম এ মতের বিপক্ষে। সামনে তাদের বর্ণনা আসবে।
♦লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে উযু করা ওয়াজিব- এ মর্মে বর্ণিত হাদীসসমূহঃ
.
(১) বুসরাহ বিনতু সফওয়ান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেউ যদি স্বীয় জননেন্দ্রীয় স্পর্শ করে তবে সে যেন উযু করে নেয়। (হাদীসটি বর্ণনা করেছেন মালিক, শাফিঈ, আহমাদ, আবূ দাঊদ, নাসায়ী, তিরমিযী, দারাকুতনী ও হাকিম। এবং তারা সকলেই হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
.
অনুরূপ বর্ণনা করেছেন ইবনু মাজাহ, ত্বাহাভী, দারিমী, তায়ালিসি, ত্বাবারানী সাগীর গ্রন্থে বুসরাহ থেকে একাধিক সনদে মারফূভাবে। হাদীসটিকে আরো যারা সহীহ বলেছেন তারা হলেন, ইমাম ইবনু মাঈন, হাযিমী, বায়হাক্বী ও ইবনু হিববান প্রমুখ মুহাদ্দিসীনে কিরাম।
শায়খ আলবানী একে সহীহ আখ্যায়িত করেছেন ইরওয়া (হা/ ১১)।
.
ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, এটিই সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদে বর্ণিত হাদীসসমূহের মধ্যে সর্বাধিক বিশুদ্ধতম)
.
(২) উম্মু হাবীবাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসঃ কেউ স্বীয় লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে সে যেন উযু করে নেয়।
(হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ইবনু মাজাহ, ত্বাহাভী, বায়হাক্বী। হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল, ইমাম আবূ যুর‘আহ, ইমাম হাকিম।
.
ইবনুস সাকান বলেন, এর কোনো দোষ আছে বলে আমার জানা নেই।
.
শায়খ আলবানীও হাদীসটিকে সহীহ আখ্যায়িত করেছেন ইরওয়া হা/ ১১৭)।
.
হাফিয ‘আত-তালখীস’ গ্রন্থে এ হাদীসটি একদল সাহাবায়ি কিরাম (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তারা হলেনঃ বুসরাহ বিনতু সাফওয়ান, জাবির, আবূ হুরাইরাহ, ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আমর, যায়দ ইবনু খালিদ, সা‘দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস, উম্মু হাবীবাহ, আয়িশাহ, উম্মু সালামাহ, ইবনু আব্বাস, ইবনু উমার, আলী ইবনু ত্বালক্ব, নু‘মান ইবনু বাশীর, আনাস, উবাই ইবনু কা‘ব, মু‘আবিয়্যাহ ইবনু হায়দাহ, ক্বাবীসাহ, উরওয়া বিনতু উনাইস (রাঃ)।
.
(৩) ‘আমর ইবনু শু‘আইব থেকে তার পিতা ও দাদার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো পুরুষ যদি স্বীয় লজ্জাস্থান স্পর্শ করে তবে সে যেন উযু করে নেয় এবং কোনো মহিলা যদি স্বীয় লজ্জাস্থান স্পর্শ করে তবে সেও যেন উযু করে নেয়। (আহমাদ, দারাকুতনী, বায়হাক্বী,
.
আলবানী বলেন, সর্বোপরি হাদীসটির সানাদ হাসান এবং পূর্বের হাদীসের কারণে মাতান সহীহ, ইরওয়া ১/১৫১-১৫২)।
.
বিশুদ্ধ সনদে দারাকুতনী ও অন্যত্র ‘আমর ইবনু শু‘আইবের স্বীয় পিতা থেকে শ্রবণ এবং শু‘আইবের শ্রবণ তার দাদা থেকে প্রমাণিত আছে।
.
হাদীসটি ইমাম তিরমিযীও বর্ণনা করেছেন এবং তিনি ‘কিতাবুল ইলালে’ বর্ণনা করেন যে, ইমাম বুখারী বলেছেনঃ এটি আমার নিকটে সহীহ)।
.
(৪) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যদি তার হাত জননেন্দ্রীয় পর্যন্ত পৌঁছায় এবং জননেন্দ্রীয়ের উপর কোনো আবরণ না থাকে তাহলে তার উপর উযু ওয়াজিব হবে। (ইবনু হিব্বান, হাদীসটিকে ইবনু হিব্বান, ইমাম হাকিম ও ইবনু আব্দুল বার (রহঃ) সহীহ বলে অভিহিত করেছেন।
ইবনুস সাকান বলেন, এ অধ্যায়ে বর্ণিত হাদীসসমূহের মধ্যে এ হাদীসটি অতি উত্তম)
.
(৫) যায়দ ইবনু খালিদ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি তার লজ্জাস্থান স্পর্শ করবে সে যেন উযু করে নেয়। (আহমাদ, বাযযার, ত্বাবারানী, হাদীসের সকল বর্ণনাকারী সহীহ এর মানদন্ডে উত্তীর্ণ। এতে ইবনু ইসহাক মুদাল্লিস হলেও তিনি এটি হাদ্দাসানী শব্দে বর্ণনা করেছেন।
.
আত-তালখীসুল হাবীর গ্রন্থে রয়েছেঃ ইসহাক ইবনু রাওয়াহ স্বীয় মুসনাদ গ্রন্তে মুহাম্মাদ ইবনু বাকর আল-বুরসানী (রহঃ) সূত্রে ইবনু জুরাইজ থেকে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
.
অতঃপর বলেছেন, এই হাদীসের সানাদ সহীহ)
.
(৬) জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ তার জননেন্দ্রীয় স্পর্শ করলে তার উপর উযু করা আবশ্যক।
(ইবনু মাজাহ, হা/ ৪৮৫, কেউ কেউ এটি মুরসালভাবেও বর্ণনা করেছেন।
শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন)
.
(৭) আবূ আইয়ূব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ কেউ স্বীয় লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে সে যেন উযু করে নেয়। (ইবনু মাজাহ, হা/ ৪৮৭, শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন)
.
(৮) ইবনু উমার (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেউ স্বীয় লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে সে যেন সালাতের উযুর ন্যায় উযু করে নেয়। (দারাকুতনী, নাসবুর রায়াহ, হাদীসের সনদে ইসহাক ইবনু মুহাম্মাদ ফারুবী নির্ভরযোগ্য।
.
ইমাম বুখারী একে স্বীয় সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন) (৯) ত্বালক্ব ইবনু আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনিও ঐ প্রতিনিধি দলের মধ্যে ছিলেন, যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসেছিলেন যাদের নিকট রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেউ যদি তার লজ্জাস্থান স্পর্শ করে তবে সে যেন উযু করে নেয়। (হাদীসটি ইমাম ত্বাবারানী বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন হাদীসটি সহীহ।
তিনি বলেন, সম্ভবতঃ ত্বালক্ব ইবনু আলী প্রথমে উযু না করা সম্পর্কিত প্রথমোক্ত হাদীসখানা শ্রবণ করেছেন, অতঃপর পরবর্তী হাদীসখানা শ্রবণ করেছেন।
তাহলেই এ হাদীস বুসরাহ, উম্মু হাবীবাহ, আবূ হুরাইরাহ এবং যায়দ ইবনু খালিদ সহ অন্যান্য সাহাবায়ি কিরাম যাদের থেকে লজ্জাস্থান স্পর্শ করার পর উযু করার বিধান বর্ণিত আছে তাদের হাদীসের সাথে মিলে যায়।
.
এতে বুঝা যায়, তিনি নাসিখ-মানসূখ উভয় ধরণের হাদীসই শ্রবণ করেছেন)
এছাড়াও এ মতের পক্ষে অধিকাংশ সাহাবায়ি কিরামগণের আসার বর্ণিত আছে। যাদের মতে, লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে উযু ওয়াজিব হবে। তারা হলেনঃ উমার ইবনুল খাত্তাব, তার পুত্র ইবনু উমার, আবূ আইয়ূব আনসারী, যায়দ ইবনু খালিদ, আবূ হুরাইরাহ, আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস, জাবির, আয়িশাহ, উম্মু হাবীবাহ, বুসরাহ বিনতু সাফওয়ান, সা‘দ আবূ ওয়াক্কাসের এক রিওয়ায়াত এবং ইবনু আব্বাসের এক রিওয়ায়াত (রাঃ)।
.
এছাড়া তাবেঈনদের থেকে রয়েছেন, উরওয়াহ ইবনু যুবায়র, সুলায়মান ইবনু ইয়াসার, আত্বা ইবনু আবূ রিবাহ, আবান ইবনু উসমান, মুজাহিদ, জাবির ইবনু যায়দ, যুহরী মুসআব ইবনু সা‘দ, ইয়াহইয়া ইবনু আবূ কাসীর, সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিবের বিশুদ্ধ মত, হিশাম ইবনু উরওয়াহ, আওযাঈ, শামের অধিকাংশ আলিম। এছাড়া ইমাম শাফিঈ, ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল এবং ইমাম মালিকের প্রসিদ্ধ মত।
.
অর্থাৎ জমহুর উলামায়ি কিরাম এ মতের পক্ষে রয়েছেন। জাবির ইবনু যায়দ সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে লজ্জাস্থান স্পর্শ করে তাহলে উযু ভঙ্গ হবে কিন্তু অনিচ্ছাকৃতভাবে ভুল বশতঃ লজ্জাস্থাহোত লেগে গেল উযু ভঙ্গ হবে না।
(নায়লুল আওত্বার) পর্যালোচনা ও অগ্রাধিকারঃ যারা ত্বালক বর্ণিত প্রথম হাদীসটি অর্থাৎ ‘উযু না করা’ সম্পর্কিত হাদীসকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন তারা স্বযং ত্বালক্ব থেকে উযু করার সমর্থনে বর্ণিত হাদীস সম্পর্কে বলেন, হয় তো প্রথম হাদীস মুস্তাহাব বুঝানো হয়েছে এবং পরের হাদীস জায়িয বুঝানো হয়েছে।
.
যেমন আল্লামা জা‘ফার আহমাদ উসমানী ‘ই‘লাউস সুনান গ্রন্থে এ মত ব্যক্ত করেছেন।
পক্ষান্তরে যারা ‘লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে উযু করতে হবে’ এ মর্মে বর্ণিত বুসরাহ ও অন্যান্য সাহাবায়ি কিরাম সূত্রে বর্ণিত মারফূ হাদীসসমূহকে গ্রহণ করেছেন, তারা বলেনঃ কয়েকটি কারণে বুসরাহ বর্ণিত হাদীস ত্বালক্ব বর্ণিত হাদীসের উপর অগ্রাধিকারযোগ্য।
.
তা হলোঃ ১. ত্বালক্ব ইবনু আলী (রাঃ) বর্ণিত হাদীসটি দুর্বল। ২. এ সম্পর্কিত হাদীসটি মানসুখ হয়ে গেছে। কেননা ত্বালক্ব হাদীসটি বর্ণনা করেছেন হিজরীর প্রথম বছরে, যখন মাসজিদে নাববী নির্মাণ হচ্ছিল।
.
পক্ষান্তরে আবূ হুরাইরাহ ইসলাম কবূল করেছেন সপ্তম হিজরীতে। তিনি উযু করা ওয়াজিব সম্পর্কিত হাদীস বর্ণনা করেছেন ত্বালক্বের হাদীসের সাত বছর পরে।
.
এতে প্রমাণিত হয়, ত্বালক্ব বর্ণিত হাদীসটি মানসূখ। তাছাড়া স্বয়ং ত্বালক্ব লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে উযু করা ওয়াজিব এ মর্মে হাদীস বর্ণনা করেছেন। যা আবূ হুরাইরাহর হাদীসের সাথে মিলে যায়।
.
৩. বুসরাহ বর্ণিত হাদীসটি সহীহ এবং এর সানাদসূত্র বেশি।
.
৪. বুসরাহ বর্ণিত হাদীসের শাহিদ (সমর্থক) বর্ণনা বেশি। কেননা বুসরাহ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন মাদীনাহর আনসার ও মুহাজিরদের অবস্থানস্থল থেকে। তখন সেখানে প্রচুর আনসার ও মুহাজির সাহাবায়ি কিরাম ছিলেন। তারা তার প্রতিবাদ করেননি। এতে তাদের পক্ষ থেকে তার সর্মথনও প্রমাণিত হয়।
.
৫. স্বয়ং ত্বালক্ব বিন আলী লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে উযু করতে হবে- এ মর্মে হাদীস বর্ণনা করেছেন। যা বুসরাহ ও অন্যান্য সাহাবায়ি কিরামের মারফূ’ হাদীসের সাথে মিলে যায়। উল্লেখ্য ইমাম ইবনু হিব্বান (রহঃ) বলেনঃ যারা হাদীসের বর্ণিত উযু দ্বারা হাত ও মুখ ধোয়ার অর্থ গ্রহণ করেন, সেটা ভুল। হাদীসে উযু বলতে সালাতে উযুকেই বুঝানো হয়েছে। যা ভিন্ন সূত্রে স্বয়ং বুসরাহ ও অন্যান্য সাহাবায়ি কিরামের হাদীসের স্পষ্টভাবে বর্ণিত আছে।
.
♦♦ সারকথাঃ কোনো আবরণের উপর লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে উযু নষ্ট হবে না। অনুরূপভাবে বেখেয়ালে সরাসরি লজ্জাস্থানে হাত লেগে গেলেও উযু নষ্ট হবে না।
কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে, কামোদ্দীপনার সাথে সরাসরি লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে উযু করা ওয়াজিব।
#আল্লাহই_অধিক_জ্ঞাত।
কোন মন্তব্য নেই