Header Ads

Header ADS

নির্দিষ্ট কারো নামে তৈরিকৃত মাযহাব মানা যাবে কি?

ইবনু
শিহাব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, সালেম
ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) তাকে (ইবনে
শিহাব) বলেছেন, তিনি [সালেম
ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ)] শামের
একজন লোকের নিকট থেকে শুনেছেন,
তিনি আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ)-
কে হজ্জে তামাত্তু সম্পর্কে জিজ্ঞেস
করলে আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ)
বললেন, তা হালাল। তখন সিরীয়
লোকটি বললেন, তোমার পিতা
(ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব) তা নিষেধ
করেছেন। তখন আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর
(রাঃ) বললেন, যে কাজ আমার পিতা
নিষেধ করেছেন সে কাজ যদি
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পালন করেন,
তাহ’লে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর
নির্দেশ অনুসরণযোগ্য, না আমার
বাবার নির্দেশ অনুসরণযোগ্য?
লোকটি বললেন, বরং রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ)-এর নির্দেশ অনুসরণযোগ্য।
তখন আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ)
বললেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হজ্জে
তামাত্তু আদায় করেছেন।
(তিরমিযী, হা/৮২৪, ‘হজ্জ’
অধ্যায়, ‘হজ্জে তামাত্তু সম্পর্কে যা
এসেছে’ অনুচ্ছেদ, সনদ ছহীহ।) ২য়
শতাব্দী হিজরীর পরে প্রচলিত
তাক্বলীদের আবির্ভাব ঘটে।
অতঃপর ৪র্থ শতাব্দী হিজরীতে
বিভিন্ন ইমামের নামে বিভিন্ন
তাক্বলীদী মাযহাবের প্রচলন হয়।
শাহ অলিউল্লাহ দেহলভী (রহঃ)
বলেন, ‘জেনে রাখ, চতুর্থ শতাব্দী
হিজরীর আগের লোকেরা নির্দিষ্ট
কোন একজন বিদ্বানের মাযহাবের
মুক্বাল্লিদ তথা অন্ধানুসারী ছিল
না। কোন সমস্যা সৃষ্টি হ’লে
লোকেরা যেকোন আলেমের নিকট
থেকে ফৎওয়া জেনে নিত। এ
ব্যাপারে কারো মাযহাব যাচাই করা
হ’ত না’। (শাহ অলিউল্লাহ,
হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগাহ
১/১৫২-৫৩ ‘চতুর্থ শতাব্দী ও তার
পরের লোকদের অবস্থা বর্ণনা’
অনুচ্ছেদ।) এই উক্তি প্রমাণ করে
যে, মাযহাবের তাক্বলীদ শুরু হয়েছে
৪র্থ শতাব্দী হিজরী হ’তে।
ওলামায়ে কেরাম-যাদের ইজতিহাদ
সর্বত্র গৃহীত হয়েছে, তাঁরা সকলেই
তাক্বলীদের বিরোধিতা করেছেন।
যেমন- ইবনুল কাইয়িম (রহঃ)
বলেন, ‘নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তির
তাক্বলীদ দ্বারা ফৎওয়া প্রদান করা
জায়েয নয়। কেননা তাক্বলীদ ইলম
নয়। আর ইলম বিহীন ফৎওয়া
প্রদান করা হারাম। সকলের
ঐক্যমত হ’ল তাক্বলীদের নাম ইলম
নয় এবং মক্বাল্লিদের নাম আলেম
নয়। (ই‘লামুল মুওয়াক্কি‘ঈন,
২/৮৬।) অতএব তাক্বলীদ নয়,
কুরআন ও হাদীছের যথাযথ
অনুসরণই ইসলামের মৌলিক
বিষয়। যেমনটি অনুসরণ করেছেন
সালাফে ছালেহীন। তারা কারো
মুক্বাল্লিদ ছিলেন না,
প্রসিদ্ধ চার ইমামের সাথে তাঁদের
ছাত্রদের অনেক মাসআলায়
মতবিরোধ লক্ষ্য করা যায়।
‘মুখতাছারুত ত্বহাবী’ গ্রন্থে অনেক
মাসআলাতে ইমাম আবু হানীফার মতের
বৈপরীত্য পরিলক্ষিত হয়।
অনুরূপভাবে ‘হেদায়াহ’ গ্রন্থ
প্রণেতা মারগিনানী, ‘বাদায়েয়ুছ
ছানায়ে’ প্রণেতা আল-কাসানী,
‘ফাতহুল ক্বাদীর’ প্রণেতা কামাল
ইবনুল হুমাম প্রমুখ আলেম হানাফী
মাযহাবের বড় বড় বিদ্বান ছিলেন।
কিন্তু তাঁরা ইমাম আবু হানীফার
অন্ধানুসারী ছিলেন না; বরং কুরআন
ও হাদীছ অনুসরণ করতে গিয়ে ইমাম
আবু হানীফার অনেক মতকে তারা
প্রত্যাখ্যান করেছেন। প্রকৃতপক্ষে
তাঁরাই ইমাম আবু হানীফার অনুসারী
ছিলেন। কেননা তিনি বলেন,
ﻲﺒﻫﺬﻣﻮﻬﻔﺜﻳﺪﺤﻟﺎﺤﺻﺍﺫﺇ.
‘যখন ছহীহ হাদীছ পাবে, জেনো
সেটাই আমার মাযহাব’।
অনুরূপভাবে ইবনু কুদামা (রহঃ),
শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু
তায়মিয়া (রহঃ), ইবনুল ক্বাইয়িম
(রহঃ), ইবনু রজব (রহঃ) হাম্বলী
মাযহাবের খ্যাতনামা বিদ্বান
ছিলেন। আবু ইসহাক আশ-শীরাযী
(রহঃ), ইমাম নববী (রহঃ) শাফেঈ
মাযহাবের এবং ইবনু আব্দিল বার্র
(রহঃ), ইবনু রুশদ (রহঃ), ইমাম
শাত্বেবী (রহঃ) মালেকী মাযহাবের
বিদ্বান ছিলেন। তাঁদের কেউ কোন
নির্দিষ্ট মাযহাবের অন্ধানুসারী
ছিলেন না। বরং তাঁরা কুরআন ও
ছহীহ হাদীছের অনুসরণ করতে
গিয়ে তাঁদের ইমামদের বিরুদ্ধে মত
পোষণ করতে সামান্যতম দ্বিধাবোধ
করেননি।

তাক্বলীদ কার জন্য বৈধ ও কার
জন্য অবৈধ :
মহান আল্লাহ কুরআন ও ছহীহ
হাদীছে যাবতীয় বিধি-বিধান
দানের মাধ্যমে দ্বীন ইসলামকে
পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন।
রাসূ্ললুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছাহাবীগণ
ইসলামের বিধান মানার ক্ষেত্রে
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ব্যতীত অন্য
কারো তাক্বলীদ করতেন না।
অনুরূপভাবে তাবেঈগণও নির্দিষ্ট
কোন ব্যক্তির তাক্বলীদ না করে
কেবলমাত্র কুরআন ও সুন্নাহর
ইত্তেবা করতেন। কিন্তু দুঃখের
বিষয় হ’ল, বর্তমান যুগে
মুসলমানগণ ইসলামের বিধান থেকে
অনেক দূরে সরে গেছে। এক্ষেত্রে
মানুষ তিন ভাগে বিভক্ত :
১- উচ্চ জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি,
যাঁরা মুজতাহিদ নামে খ্যাত। তাঁদের
জন্য অন্য কারো তাক্বলীদ করা
বৈধ নয়।
২- মধ্যম জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি,
যাঁরা তাফসীর, হাদীছ, ফিক্বহ
এবং আক্বীদায় যথেষ্ট জ্ঞান অর্জন
করেছেন এবং দলীল গ্রহণের
ক্ষেত্রে ছহীহ ও যঈফ হাদীছের
মধ্যে পার্থক্য করতে সক্ষম, তাঁদের
জন্যও অন্য কারো তাক্বলীদ করা
বৈধ নয়।
৩- সাধারণ মানুষ, যাদের কুরআন ও
সুন্নাহর কোন জ্ঞান নেই, তাদের
জন্য উপরোক্ত দুই প্রকারের
অন্তর্ভুক্ত যেকোন আলেমের নিকট
জিজ্ঞেস করা বৈধ। কারণ আল্লাহ
বলেছেন-
َﺕَﻼْﻤُﺘْﻨُﻜْﻧِﺇِﺮْﻛِّﺬﻟﺎَﻠْﻫَﺃﺍﻮُﻟَﺄْﺳﺎَﻓ
َﻥْﻮُﻤَﻠْﻋ. ‘তোমরা যদি না জান,
তাহ’লে জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস
কর’ (নাহল ৪৩)। তবে এক্ষেত্রে
নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তির মত অথবা
নির্দিষ্ট কোন মাযহাবের
তাক্বলীদ বা অন্ধানুসরণ করা বৈধ
নয়।

নির্দিষ্ট কোন মাযহাবের
তাক্বলীদ করার হুকুম :
কোন মুসলিম ব্যক্তির জন্য (সে
শিক্ষিত হোক বা মূর্খই হোক)
নির্দিষ্ট কোন এক ব্যক্তির
তাক্বলীদ তথা বিনা দলীলে তার
থেকে সকল মাসআলা গ্রহণ করা
জায়েয নয়। পক্ষান্তরে চার
মাযহাবের যেকোন একটির অনুসরণ
করা ফরয মর্মে প্রচলিত কথাটি
ভিত্তিহীন এবং কুরআন ও সুন্নাহ
পরিপন্থী। কারণ আল্লাহ তা‘আলা
কোন ব্যক্তির অন্ধানুসরণ না করে
শুধু কুরআন ও সুন্নাহ অনুসরণ করার
নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা
বলেন-
ْﻢُﻜِّﺑَّﺮْﻨِّﻤْﻤُﻜْﻴَﻟِﺈَﻟِﺰْﻧُﺃﺎَﻣﺍْﻮُﻌِﺒَّﺗِﺍ
ْﻲِﻠَﻗَﺀﺎَﻴِﻟْﻭَﺄِﻬِﻧْﻭُﺪْﻨِﻣﺍْﻮُﻌِﺒَّﺘَﺗَﻻَﻭ
َﻥْﻭُﺮَّﻛَﺬَﺗﺎَّﻣًﻻ. ‘তোমাদের নিকট
তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হ’তে
যা অবতীর্ণ হয়েছে, তোমরা তার
অনুসরণ কর, আর তোমরা আল্লাহকে
ছেড়ে অন্য কাউকে বন্ধুরূপে অনুসরণ
করনা। তোমরা খুব অল্পই উপদেশ
গ্রহণ করে থাক’ (আ‘রাফ ৩)।
আর আল্লাহ তা‘আলা প্রেরিত বিধান
বুঝার জন্য যোগ্য আলেমের নিকটে
জিজ্ঞেস করার নির্দেশ দিয়ে
বলেন- ‘তোমরা যদি না জান তবে
জ্ঞানীগণকে জিজ্ঞেস কর’ (নাহল
৪৩)। অতএব শরী‘আতের অজানা
বিষয় সমূহ আলেমদের নিকট থেকে
জেনে নিতে হবে। এর অর্থ এই নয়
যে, নির্দিষ্ট কোন এক ব্যক্তির
তাক্বলীদ করতে হবে।
তাক্বলীদ একটি বহু প্রাচীন
জাহেলী প্রথা। বিগত উম্মতগুলির
অধঃপতনের মূলে তাক্বলীদ ছিল
সর্বাপেক্ষা ক্রিয়াশীল উপাদান।
তারা তাদের নবীদের পরে উম্মতের
বিদ্বান ও সাধু ব্যক্তিদের
অন্ধানুসরণ করে এবং ভক্তির
আতিশয্যে তাদেরকে রব-এর আসন
দিয়ে সম্মান প্রর্দশন করতে থাকে।
যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
ْﺭَﺄْﻤُﻬَﻧﺎَﺒْﻫُﺭَﻮْﻤُﻫَﺭﺎَﺒْﺣَﺃﺍْﻭُﺬَﺨَّﺗِﺍ
َﻦْﺑﺎَﺤْﻴِﺴَﻤْﻟﺍَﻮِﻬﻠﻟﺎِﻧْﻭُﺪْﻨِﻣﺎًﺑﺎَﺑ
َﻝِﺇﺍْﻭُﺪُﺒْﻌَﻴِﻟَّﻻِﺇﺍْﻭُﺮِﻣُﺃﺎَﻣَﻮَﻤَﻳْﺮَﻣ
َّﻢَﻌُﻬَﻧﺎَﺤْﺒُﺳَﻮُﻫَّﻻِﺈَﻬَﻟِﺇَﻻﺍًﺪِﺣﺍَﻭﺎًﻫ
َﻥْﻮُﻛِﺮْﺸُﻳﺍ. ‘তারা আল্লাহকে ছেড়ে
তাদের পন্ডিতগণ ও সংসার-
বিরাগীদের রব হিসাবে গ্রহণ
করেছে এবং মারিয়াম পুত্র
মাসীহকেও। অথচ তারা এক ইলাহের
ইবাদত করার জন্যই আদিষ্ট হয়েছে,
তিনি ব্যতীত কোন (হক) ইলাহ
নেই। তারা যে শরীক করে তিনি তা
থেকে পবিত্র’ (তওবা৩১)।

ইমাম রাযী (৫৪৪-৬০৬ হিঃ)
বলেন, অধিকাংশ মুফাসসিরের মতে
উক্ত আয়াতে উল্লেখিত ‘আরবাব’
অর্থ এটা নয় যে, ইহুদী-নাছারাগণ
তাদেরকে বিশ্বচরাচরের ‘রব’ মনে
করত। বরং এর অর্থ হ’ল এই যে,
তারা তাদের আদেশ ও নিষেধ সমূহের
আনুগত্য করত। যেমন ইসলাম
গ্রহণের উদ্দেশ্যে নাছারা বিদ্বান
আদী বিন হাতিম রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
-এর দরবারে হাযির হ’লেন। তখন
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সূরায়ে তওবা
পড়ছিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যে
উপরোক্ত (তওবা ৩১) আয়াতে পৌঁছে
গেলেন। আদী বললেন, আমরা তাদের
ইবাদত করিনা। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
জওয়াবে বললেন, আল্লাহ তা‘আলা
যেসব বস্ত্ত হালাল করেছেন তাকি
তারা হারাম করত না? অতঃপর
তোমরাও তাকে হারাম গণ্য করতে।
এমনিভাবে আল্লাহ তা‘আলা যেসব
বস্ত্ত হারাম করেছেন তা কি তারা
হালাল করত না? অতঃপর তোমরাও
তাকে হালাল গণ্য করতে। আদী
বললেন, হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বললেন, সেটাইতো তাদের ইবাদত
হ’ল। (ইমাম রাযী, তাফসীরুল
কাবীর ১৬/২৭; ডঃ মুহাম্মাদ
আসাদুল্লাহ আল-গালিব, আহলেহাদীছ
আন্দোলন উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ
দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষিত সহ,
পৃঃ১৫১।)
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
ﺎَﻟَﺰْﻧَﺃﺎَﻣﺍْﻮُﻌِﺒَّﺗﺎُﻤُﻬَﻠَﻠْﻴِﻗﺍَﺫِﺇَﻭ
َﻉﺎَﻨْﻴَﻔْﻟَﺃﺎَﻤُﻌِﺒَّﺘَﻨْﻠَﺑﺍْﻮُﻟﺎَﻘُﻬﻠﻟ
َﻼْﻤُﻫُﺅﺎَﺑﺂَﻧﺎَﻛْﻮَﻟَﻭَﺃﺎَﻧَﺀﺎَﺑﺂِﻬْﻴَﻟ
َﻥْﻭُﺪَﺘْﻬَﻳَﻻَﻭﺎًﺌْﻴَﺸَﻧْﻮُﻠِﻘْﻌَﻳ. ‘আর
যখন তাদেরকে বলা হয় আল্লাহ যা
নাযিল করেছেন, তোমরা তার
অনুসরণ কর, তারা বলে, বরং আমরা
অনুসরণ করব আমাদের পিতৃ-
পুরুষদেরকে যার উপর পেয়েছি। যদি
তাদের পিতৃ-পুরুষরা কিছু না বুঝে
এবং হেদায়াতপ্রাপ্ত না হয়,
তাহ’লেও কি’? (বাক্বারাহ ১৭০)
অত্র আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম রাযী
বলেন, আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে
নির্দেশ দিচ্ছেন যেন তারা তাঁর
নাযিলকৃত প্রকাশ্য দলীল সমূহের
অনুসরণ করে। কিন্তু তারা বলে যে,
আমরা ওসবের অনুসরণ করব না, বরং
আমরা আমাদের বাপ-দাদা ও পূর্ব
পুরুষদের অনুসরণ করব। তারা যেন
তাক্বলীদের মাধ্যমে দলীলকে
প্রতিরোধ করছে।
ইমাম রাযী বলেন, যদি মুক্বাল্লিদ
ব্যক্তিটিকে বলা হয় যে, কোন
মানুষের প্রতি তাক্বলীদ সিদ্ধ
হবার শর্ত হ’ল একথা জ্ঞাত হওয়া
যে, ঐব্যক্তি হক-এর উপরে আছেন,
একথা তুমি স্বীকার কর কি-না?
যদি স্বীকার কর তাহ’লে জিজ্ঞেস
করব তুমি কিভাবে জানলে যে
লোকটি হক-এর উপরে আছেন? যদি
তুমি অন্যের তাক্বলীদ করা দেখে
তাক্বলীদ করে থাক, তাহ’লে তো
গতানুগতিক ব্যাপার হয়ে গেল। আর
যদি তুমি তোমার জ্ঞান দ্বারা
উপলব্ধি করে থাক, তাহ’লে তো আর
তাক্বলীদের দরকার নেই, তোমার
জ্ঞানই যথেষ্ট। যদি তুমি বল যে,
ঐব্যক্তি হকপন্থী কি-না তা জানা
বা না জানার উপরে তাক্বলীদ
নির্ভর করে না, তাহ’লে তো বলা
হবে যে, ঐ ব্যক্তি বাতিলপন্থী
হ’লেও তুমি তার তাক্বলীদকে সিদ্ধ
করে নিলে। এমতাবস্থায় তুমি
জানতে পার না তুমি হকপন্থী না
বাতিলপন্থী। জেনে রাখা ভাল যে,
পূর্বের আয়াতে (বাক্বারাহ
১৬৮-১৭০) শয়তানের পদাংক
অনুসরণ না করার জন্য কঠোর
হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করার পরেই এই
আয়াত বর্ণনা করে আল্লাহপাক এ
বিষয়ে ইংগিত দিয়েছেন যে,
শয়তানী ধোঁকার অনুসরণ করা ও
তাক্বলীদ করার মধ্যে কোন
পার্থক্য নেই। অতএব এই আয়াতের
মধ্যে মযবুত প্রমাণ নিহিত রয়েছে
দলীলের অনুসরণ এবং চিন্তা-
গবেষণা ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে ও
দলীলবিহীন কোন বিষয়ের দিকে
নিজেকে সমর্পণ না করার ব্যাপারে।
(তাফসীরুল কাবীর ৫/৭;
আহলেৃহাদীছ আন্দোলন উৎপত্তি ও
ক্রমবিকাশ দক্ষিণ এশিয়ার
প্রেক্ষিতসহ, পৃঃ ১৫৩-১৫৪।)
শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে
তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, মানুষের
উপরে আল্লাহ, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
এবং আমীরের আনুগত্য করা
ওয়াজিব। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
ﺍﺍﻮُﻌْﻴِﻃَﺃﺍْﻮُﻨَﻣﺂَﻨْﻳِﺬَّﻟﺍﺎَﻬُّﻳَﺃﺎَﻳ
ْﻝﺎﻴِﻟْﻭُﺃَﻮَﻟْﻮُﺳَّﺮﻟﺍﺍﻮُﻌْﻴِﻃَﺃَﻮَﻬﻠﻟ
َﻑٍﺀْﻲَﺸْﻴِﻔْﻤُﺘْﻋَﺯﺎَﻨَﺘْﻧِﺈَﻔْﻤُﻜْﻨِﻣِﺮْﻣَﺃ
ُﺖْﻨُﻜْﻧِﺈِﻟْﻮُﺳَّﺮﻟﺍَﻮِﻬﻠﻟﺎﻯَﻟِﺈُﻫْﻭُّﺩُﺭ
ِﺮِﺧﺂْﻟﺎِﻣْﻮَﻴْﻟﺍَﻮِﻬﻠﻟﺎِﺒَﻧْﻮُﻨِﻣْﺆُﺘْﻣ
ًﻼْﻳِﻭْﺄَﺘُﻨَﺴْﺣَﺃَّﻭٌﺮْﻴَﺨَﻜِﻟٰٰﺫ- ‘হে
মুমিনগণ! তোমরা আনুগত্য কর
আল্লাহর , আনুগত্য কর রাসূলের এবং
আনুগত্যকর তোমাদের আমীরের যদি
তোমরা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস
কর। কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে
মতভেদ ঘটলে ফিরে চল আল্লাহ এবং
তাঁর রাসূলের দিকে। এটাই উত্তম
এবং পরিণামে প্রকৃষ্টতর’ (নিসা
৫৯)। সুতরাং আল্লাহ এবং তাঁর
রাসূলের আনুগত্য করার লক্ষ্যেই
আমীরের আনুগত্য করতে হবে।
অতঃপর পরস্পরে মতভেদ দেখা দিলে
ফিরে যেতে হবে আল্লাহ ও তাঁর
রাসূলের দিকে। আর যখন কোন নতুন
বিষয় আসবে তখন এমন আলেমের
নিকট জিজ্ঞেস করতে হবে, যিনি
কুরআন ও ছহীহ হাদীছ যাচাই করে
ফৎওয়া প্রদান করেন। এক্ষেত্রে
মাযহাবী গোঁড়ামিকে কখনোই স্থান
দেয়া যাবে না। অর্থাৎ একজন যোগ্য
আলেম- সে যে মাযহাবেরই অনুসারী
হোক না কেন, তাঁর কাছেই জিজ্ঞেস
করতে হবে। যদি কোন মানুষ
নির্দিষ্ট কোন মাযহাবের অনুসরণ
করে আর দেখে যে, কিছু মাসআলার
দলীল গ্রহণের ক্ষেত্রে তার
মাযহাব থেকে অন্য মাযহাবই
শক্তিশালী, তাহ’লে তার উপর
মাযহাবী গোঁড়ামি পরিত্যাগ করে
শক্তিশালী দলীল গ্রহণ করাই
ওয়াজিব। আর যদি কুরআন ও ছহীহ
হাদীছের উপর মাযহাবী
গোঁড়ামিকেই প্রাধান্য দেয়, তাহ’লে
সে পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
(ইবনে তায়মিয়াহ, মাজমূউ
ফাতাওয়া, ২০/২০৮-২০৯*

একদা শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়া
জিজ্ঞাসিত হ’লেন এমন এক
ব্যক্তি সম্পর্কে, যে নির্দিষ্ট
কোন এক মাযহাবের অনুসারী এবং
মাযহাব সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা
রাখেন। অতঃপর তিনি হাদীছ
গবেষণায় লিপ্ত হন এবং এমন কিছু
হাদীছ তার সামনে আসে যে
হাদীছগুলোর নাসখ, খাছ ও অপর
হাদীছের বিরোধী হওয়ার ব্যাপারে
তিনি কিছুই জানেন না। কিন্তু
তার মাযহাব হাদীছগুলোর
বিরোধী। এখন তার উপর কি
মাযহাবের অনুসরণ করা জায়েয, না
তার মাযহাব বিরোধী ছহীহ
হাদীছগুলোর উপর আমল করা
ওয়াজিব?
জওয়াবে তিনি বলেন, ‘কুরআন,
সুন্নাহ ও ইজমা দ্বারা প্রমাণিত
হয় যে, আল্লাহ তা‘আলা মানুষের
উপর তাঁর ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য
করা ফরয করেছেন। রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) ব্যতীত পৃথিবীর কোন
মানুষের আনুগত্য তথা তার প্রতিটি
আদেশ-নিষেধ মান্য করাকে ফরয
করেননি, যদিও সে ব্যক্তি
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পরে
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ হয়। আর
সকলে ঐক্যমত পোষণ করেন যে,
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ব্যতীত পৃথিবীর
কোন মানুষ মা‘ছূম বা নিষ্পাপ নয়,
যার প্রতিটি আদেশ-নিষেধ চোখ
বন্ধ করে গ্রহণ করা যেতে পারে।
আর ইমামগণ অর্থাৎ ইমাম আবু
হানীফা (রহঃ), ইমাম মালেক
(রহঃ), ইমাম শাফেঈ (রহঃ) ও
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ)
সকলেই তাঁদের তাক্বলীদ করতে
নিষেধ করেছেন’। (ইবনে
তায়মিয়াহ, মাজমূউ ফাতাওয়া,
২০/২১০-২১৬।)
ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ)
বলেন, কারো উপরই নির্দিষ্ট কোন
মাযহাবের তাক্বলীদ করা সিদ্ধ
নয়। এমনকি শারঈ বিষয়ে অজ্ঞ
ব্যক্তিদের কোন মাযহাব নেই।
কেননা মাযহাব তাদের জন্য যারা
মাযহাবের কিতাবপত্র পড়েছে এবং
অনুসরণীয় মাযহাবের ইমামদের
ফৎওয়া সম্পর্কে জ্ঞান রাখে।
পক্ষান্তরে যারা মাযহাব সম্পর্কে
জ্ঞানার্জন না করেই নিজেদেরকে
হানাফী, শাফেঈ, মালেকী ও
হাম্বলী বলে দাবী করে তাদের কথা
ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে নাহু না পড়ে
নিজেকে নাহুবিদ দাবী করে, ফিক্বহ
না পড়ে নিজেকে ফক্বীহ দাবী
করে’। (ইবনুল ক্বাইয়িম, ই‘লামুল
মুওয়াক্কি‘ঈন, ৬/২০৩-২০৫।)
ইবনু আবিল ইযয হানাফী (রহঃ)
বলেন, ‘যদি কোন ব্যক্তির সামনে
এমন কোন বিষয় উপস্থিত হয়, যে
বিষয়ের দলীল বা আল্লাহর বিধান
সম্পর্কে তার জানা না থাকে এবং
বিরোধী কোন মতও জানা না থাকে,
তাহ’লে তার উপর কোন ইমামের
তাক্বলীদ করা জায়েয’। কিন্তু যদি
তার সামনে দলীল স্পষ্ট হয়, আর
সে নির্দিষ্ট কোন ইমামের
তাক্বলীদকে জলাঞ্জলী দিয়ে উক্ত
দলীলকেই গ্রহণ করে, তাহ’লে সে
মুক্বাল্লিদ তথা কোন ব্যক্তির
অন্ধানুসারী না হয়ে মুত্তাবি তথা
কুরআন ও সুন্নাহর অনুসারী হিসাবে
পরিগণিত হবে।

আর যদি তার সামনে দলীল স্পষ্ট
হওয়ার পরও তার বিরুদ্ধাচরণ করে
অথবা দলীলকে বুঝার পরও তাকে
উপেক্ষা করে নির্দিষ্ট কোন
ব্যক্তির তাক্বলীদ করে, সে আল্লাহ
তা‘আলার অত্র বাণীর অন্তর্ভুক্ত
হবে,
ْﺮَﻘْﻴِﻔَﻜِﻠْﺒَﻘْﻨِﻣﺎَﻨْﻠَﺳْﺭَﺃﺎَﻤَﻜِﻟٰﺬَﻛَﻭ
ﺎَّﻧِﺇﺎَﻫْﻮُﻓَﺮْﺘُﻤَﻟﺎَﻗَّﻻِﺇٍﺮْﻳِﺬَّﻨْﻨِّﻣٍﺔَﻳ
َﻞَﻋﺎَّﻧِﺇَّﻭٍﺔَّﻣُﺄﻯَﻠَﻋﺎَﻧَﺀﺎَﺑﺁﺎَﻧْﺪَﺟَﻭ
َﻥْﻭُﺪَﺘْﻘُّﻤﻤِﻫِﺭﺎَﺛﺂﻯ- ‘এইভাবে
তোমার পূর্বে কোন জনপদে যখনই
আমি কোন সতর্ককারী প্রেরণ
করেছি, তখন তার সমৃদ্ধশালী
ব্যক্তিরা বলত, আমরা তো আমাদের
পূর্বপুরুষদেরকে পেয়েছি এক
মতাদর্শের অনুসারী এবং আমরা
তাদেরই পদাংক অনুসরণ
করছি’ (যুখরুফ ২৩)। ‘যখন
তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ যা
অবতীর্ণ করেছেন তোমরা তার
অনুসরণ কর, তখন তারা বলে, না;
বরং আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে
যার উপর পেয়েছি তার অনুসরণ
করব। এমনকি তাদের পিতৃপুরুষগণ
যদিও কিছুই বুঝত না এবং তারা
সৎপথেও পরিচালিত ছিল না,
তথাপিও’? (বাক্বারাহ ১৭০)।
(ইবনে আবিল ইযয হানাফী, আল-
ইত্তিবা, পৃঃ ৭৯-৮০।)
সাবেক সঊদী গ্র্যান্ড মুফতী,
বিশ্ববরেণ্য আলেমে রববানী
শায়খআব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ
বিন বায (রহঃ) বলেন, ‘চার
মাযহাবের কোন এক মাযহাবের
তাক্বলীদ করা ওয়াজিব’ মর্মে
প্রচলিত কথাটি নিঃসন্দেহে ভুল;
বরং চার মাযহাব সহ অন্যদের
তাক্বলীদ করা ওয়াজিব নয়। কেননা
কুরআন ও সান্নাহ-এর ইত্তেবা করার
মধ্যেই হক নিহিত আছে, কোন
ব্যক্তির তাক্বলীদের মধ্যে নয়’।
(আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন
বায, মাজমূউ ফাতাওয়া, ৩/৭২। )
অতএব নির্দিষ্ট কোন মাযহাবের
অন্ধানুসরণ করা নিকৃষ্ট বিদ‘আত,
যা অনুসরণ করার আদেশ কোন
ইমামই দেননি যারা আল্লাহ ও
তাঁররাসূল (ছাঃ)সম্পর্কে তাদের
অনুসারীদের চেয়ে বেশী অবগত।
সুতরাং নির্দিষ্ট কোন মাযহাবের
অন্ধানুসরণ না করে একমাত্র কুরআন
ও ছহীহ হাদীছের অনুসরণ করতে
হবে। যখনই ছহীহ হাদীছ পাওয়া
যাবে তখনই তা নিঃশর্ত ভাবে
অবনত মস্তকে মেনে নিতে হবে।

তাক্বলীদপন্থীদের দলীল ও তার
জবাব :
প্রথম দলীল : তাক্বলীদপন্থীদের
নিকট তাক্বলীদ জায়েয হওয়ার
সবচেয়ে শক্তিশালী দলীল হ’ল
আল্লাহ তা‘আলার বাণী-ﺍْﻮُﻟَﺄْﺳﺎَﻓ
َﻞْﻫَﺃ ِﺮْﻛِّﺬﻟﺍ ْﻥِﺇ ْﻢُﺘْﻨُﻛ َﻻ
َﻥْﻮُﻤَﻠْﻌَﺗ- ‘আর জ্ঞানীদের জিজ্ঞেস
কর, যদি তোমরা না জেনে থাক’
(নাহল ৪৩)। আর আমরা অজ্ঞ
ব্যক্তি। অতএব আমাদের উপর
ওয়াজিব হ’ল আলেমদের নিকট
জিজ্ঞেস করা ও তাদের দেওয়া
ফৎওয়ার তাক্বলীদ করা।
জবাব : আয়াতে বর্ণিত ِﺮْﻛِّﺬﻟﺍ ُﻞْﻫَﺃ
কারা? তারাও যদি অন্য কারো
মুক্বাল্লিদ হয়, তাহ’লে তারা
অন্যদেরকেও ভুলের মধ্যে পতিত
করবে। আর যদি তারাই প্রকৃতُﻞْﻫَﺃ
ِﺮْﻛِّﺬﻟﺍ না হয়, তাহ’লে এতে
কুরআনের আয়াতের অপব্যাখ্যা করা
হবে।
আয়াতে বর্ণিত ِﺮْﻛِّﺬﻟﺍ ُﻞْﻫَﺃ -এর
ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মনীষীগণ
বিভিন্ন অভিমত পেশ করেছেন।
নিম্নে তা উল্লেখ করা হ’ল।-
ইমাম ইবনু হাযম (রহঃ) বলেন,
তারা হ’লেনﻦﻨﺴﻟﻼﻫﺃ তথা
সুন্নাতের অনুসারীগণ
অথবাﻲﺣﻮﻟﻼﻫﺃ অর্থাৎ অহী-র
বিধানের অনুসারী। (ইমাম ইবনু
হাযম, আল-ইহকাম ফী উছুলিল
আহকাম, পৃঃ ৮৩৮।)
ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন,
ِﺮْﻛِّﺬﻟﺍ ُﻞْﻫَﺃ দ্বারা উদ্দেশ্য হ’ল,
ﺚﻳﺪﺤﻟﺍﻭ ﻥﺁﺮﻘﻟﺍ ﻞﻫﺃ অর্থাৎ
কুরআন ও হাদীছের অনুসারীগণ।
ইমাম ইবনে হাযম (রহঃ) আরো
বলেন, ِﺮْﻛِّﺬﻟﺎُﻠْﻫَﺃ দ্বারা উদ্দেশ্য
হ’ল, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হ’তে যারা
হাদীছ বর্ণনা করেছেন এবং
কুরআনের আহকাম সম্পর্কে জ্ঞান
সম্পন্ন আলেমগণ। যেমন আল্লাহ
তা‘আলা বলেন,
َﻞُﻬَﻟﺎَّﻧِﺇَﻭَﺮْﻛِّﺬﻟﺍﺎَﻨْﻟَّﺰَﻨُﻨْﺤَﻧﺎَّﻧِﺇ
َﻥْﻮُﻈِﻓﺎَﺣ ‘নিশ্চয়ই আমি কুরআন
নাযিল করেছি, আর আমিই তার
হিফাযতকারী’ (হিজর ৯)। অতএব
আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে কুরআন ও
সুন্নাহ সম্পর্কে পারদর্শী
আলেমদেরকে জিজ্ঞেস করার নির্দেশ
দিয়েছেন। অনুরূপভাবে তাঁদের
প্রতিও এনির্দেশ দিয়েছেন যে,
তাঁরা যেন মানুষকে কুরআন ও সুন্নাহ
সম্পর্কে যথাযথ সংবাদ দেন।
তেমনি তাঁদের ভ্রষ্ট মতামত
প্রদান ও মিথ্যা ধারণার
ভিত্তিতে দ্বীনের মধ্যে নতুন
কিছুকে বৈধ করার অনুমতি দেননি।
(আল-ইহকাম ফী উছুলিল আহকাম,
পৃঃ ৮৩৮।)
আল্লাহ মুসলিম জাতিকে অহি তথা
পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ
অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেন।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)ও আমাদেরকে একই
নির্দেশ প্রদান করেছেন। আল্লাহ
তা‘আলা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর
স্ত্রীদেরকে নির্দেশ দিয়ে বলেন,
ﺂْﻨِﻤَّﻧُﻚِﺗْﻮُﻴُﺒْﻴِﻔﻯَﻠْﺘُﻳﺎَﻤَﻧْﺮُﻛْﺫﺍَﻭ
ﻞﻟﺎَّﻧِﺇِﺔَﻤْﻜِﺤْﻟﺍَﻮِﻬﻠﻟﺎِﺗﺎَﻳ
ﺍًﺮْﻴِﺒَﺧﺎًﻔْﻴِﻄَﻟَﻥﺎَﻜَﻫ – ‘আর
তোমাদের ঘরে আল্লাহর যে
আয়াতসমূহ ও হিকমত পঠিত হয়, তা
তোমরা স্মরণ রেখ। নিশ্চয়ই
আল্লাহ অতি সূক্ষ্মদর্শী, সম্যক
অবহিত’ (আহযাব ৩৪)। অতএব
আমাদের সকলের উপর ওয়াজিব হ’ল
কুরআন ও সুন্নাহর ইত্তেবা করা।
আর কুরআন ও সুন্নাহ সম্পর্কে অজ্ঞ
ব্যক্তিদের যেকোন যোগ্য আলেমের
নিকট শরী‘আতের বিধান সম্পর্কে
জিজ্ঞেস করা। এক্ষেত্রে
নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তির
তাক্বলীদ বা অন্ধানুসরণ না করা।
যেমন আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ)
অন্যান্য ছাহাবীদেরকে রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ)-এর কথা, কর্ম এবং সুন্নাহ
সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতেন। এছাড়া
অন্য কিছু জিজ্ঞেস করতেন না।
অনুরূপভাবে ছাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ)-এর স্ত্রীগণকে বিশেষ করে
আয়েশা (রাঃ)-কে তাঁর বাড়ির
অভ্যন্তরের কাজ সম্পর্কে জিজ্ঞেস
করতেন। ফক্বীহগণের মধ্যেও
অনুরূপ বিষয় লক্ষ্য করা যায়।
যেমন ইমাম শাফেঈ (রহঃ) ইমাম
আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ)-কে
বলেছেন,
ﺢﻟﺎﺒﻤﻠﻋﺄﺘﻧﺄﻬﻠﻟﺍﺪﺒﻋﺎﺑﺃﺎﻳ
ﻉﺄﻔﺜﻳﺪﺤﻟﺎﺤﺻﺍﺫﺈﻓ،ﻲﻨﻤﺜﻳﺩ
ﻥﺎﻛﺎﻴﻣﺎﺸﻬﻴﻟﺈﺒﻫﺫﺃﻲﺘﺤﻴﻨﻤﻟ
ﺎﻳﺮﺼﺑﻭﺃﺎﻴﻓﻮﻛﻭﺃ ‘হে আবু
আব্দুল্লাহ! আপনি আমার চেয়ে
হাদীছ সম্পর্কে অধিক জ্ঞান
রাখেন, যখন ছহীহ হাদীছ পাবেন,
তখন তা আমাকে শিক্ষা দিবেন।
যদিও তা গ্রহণ করার জন্য আমাকে
শাম, কুফা অথবা বাছরায় যেতে হয়’।
(ইবনুল ক্বাইয়িম, ই’লামুল
মুয়াক্কিঈন ২/১৬৪; আবু আব্দুর
রহমান সাঈদ মা‘শাশা, আল-
মুকাল্লিদূন ওয়াল আইম্মাতুল
আরবা‘আহ, পৃঃ ৯৪।) অতীতে
আলেমগণের মধ্যে কেউ এমন ছিলেন
না যে, তিনি নির্দিষ্ট কোন এক
ব্যক্তির বা মাযহাবের রায় বা
অভিমত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতেন
এবং অনুসরণীয় ব্যক্তি বা
মাযহাবের রায়কেই গ্রহণ করতেন
এবং অন্যান্য রায়ের বিরোধিতা
করতেন। (ই’লামুল মুয়াক্কিঈন
২/১৬৪।)

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.