সিজদা সম্পর্কিত কিছু মাস'আলা
সিজদা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু মাস’আলাঃ
(১) আমরা সিজদা করার সময় অনেক সময় খেয়াল করিনা, তাই নাক মাটিতে না রেখেই সিজদা করি। সিজদার সময় নাক মাটিতে লাগিয়ে রাখতে হবে। “রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম নাক ও কপাল মাটিতে মজবুতভাবে ঠেকিয়ে রাখতেন।” আবু দাউদ, তিরমিযী, হাদীস সহীহ।
“ঐ বান্দার সালাত সহীহভাবে আদায় হয়না যে কপালের মতো করে নাক মাটিতে ঠেকায় না।” দারা কুতনী, তাবারানী ৩/১৪০/১।
(২) অনেকে বিশেষ করে নারীরা সিজদার সময় মাটিতে দুই হাত বিছিয়ে দেয়। এই কাজটা হারাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তুমি যখন সিজদা করবে তখন তোমার হাতে তালুদ্বয় (যমীনে) রাখবে আর দুই কনুই উঁচু করে রাখবে।” সহীহ মুসলিম।
অন্য হাদীসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের কেউ যেন দুই হাতকে কুকুরের মতো বিছিয়ে না দেয়।” বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ, তিরমিযী।
(৩) সিজদার সময় দুই পা এক সাথে করে রাখতে হবে। আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর সিজদাতে দুই পায়ের গোড়ালি জোড়া লাগানো অবস্থায় দেখেছি। ইবনে খুজাইমা, সহীহ।
এই সময় পায়ের আংগুলগুলো একটু ভাজ করে কিবলার দিকে রাখতে হবে। বায়হাকী।
বিঃদ্রঃ এইসবগুলো নিয়ম নারী ও পুরষের জন্য। এর বিপরীতে কিছু জাল হাদীস আছে। সহীহ হাদীস বাদ দিয়ে জাল হাদীসের উপরে আমল করা বৈধ নয়।
সিজদার তাসবীহ পড়বেন “সুবহা-না রব্বিয়াল আ‘লা” অন্তত ৩ বার, বা আরো বেশি পড়া ভালো। এছাড়া আরো দুয়াও পড়তে পারেন “সুবহা-নাকাল্লা-হুম্মা রব্বানা ওয়া বিহামদিকা আল্লা-হুম্মাগফিরলী”
এছাড়া সিজদাতে মুনাজাতের মতো দুনিয়া আখেরাতের জন্য দুয়া করতে পারেন, ফরয নফল যেকোন সালাতে।
.
সিজদাতে দুয়া করা নিয়ে বিস্তারিত আমি অন্য পোস্টে উল্লেখ করেছি।
সিজদায় তাসবীহ, দুয়া পড়া শেষ হলে “আল্লাহু আকবার” বলে সিজদা থেকে উঠে বসবেন। এইসময় পিঠ সোজা করতে হবে, পিঠ বাকা রেখে দ্রুত দ্বিতীয় সিজদায় চলে যাওয়া কঠোরভাবে নিষিদ্ধ, এইরকম করলে সালাত কবুল হবেনা। দুই সিজদার মাঝখানে এই সময় দুয়া আছে এইগুলো করবেন। আমাদের দেশের সাধারণ মানুষতো দূরের কথা, এমনকি বেশিরভাগ ইমামই দুই সিজদার মাঝখানে দুয়া না করে দ্বিতীয় সিজদায় চলে যায় – এটা স্পষ্ট সুন্নতবিরোধী একটা কাজ। জানা থাকা ভালো, রুকু ও সিজদাতে তাসবীহ পড়তে হবে এমন হাদীস থেকে দুই সেজদার মাঝখানে দুয়া করতে হবে এই মর্মে হাদীস আরো বেশি আছে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে বেশিরভাগ মানুষ এই সুন্নতকে বাদ দিয়েছে। এমন সহীহ হাদীস আছেযে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম দুই সেজদার মাঝখানে এতো বেশি সমইয় ধরে দুয়া করতেন যে সাহাবীরা সন্দেহে পড়ে যেতেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম ২য় সিজদা করতে ভুলে গেলেন কিনা?
.
দুই সিজদার মাঝখানে বসা অবস্থায়ঃ
এখানে নিজের পছন্দমতো যেকোনো দুয়া করা যায়না, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেই দুয়াগুলো করেছেন শুধুমাত্র সেই দুয়াগুলোই করা যাবে। আর এইখানে দুয়া আরবীতেই করতে হবে। দুই সিজদার মাঝখানে এই দুয়াগুলো করার সময় তাশাহুদের মতো আংগুন দিয়ে ইশারা করা সুন্নত। যেই দুয়া করতে হবেঃ ছোট্ট এই দুয়াটা কি মুখস্থ করা যায়না?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফরয, সুন্নত, নফল যে কোনো সালাতের দুই সিজদার মাঝখানে বসা অবস্থায় এই দুআটি করতেনঃ
رَبِّ اغْفِرْ لِي، رَبِّ اغْفِرْ لِي
উচ্চারণঃ রাব্বিগ ফিরলি, রাব্বিগ ফিরলি।
অর্থঃ হে আমার রব আমাকে ক্ষমা করা, হে আমার রব আমাকে ক্ষমা কর। আবু দাউদ ১/৩১, ইবনে মাজাহ, দুয়াটা সহীহ।
এই ছোট্ট দুয়াটা পড়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ মিস করা ঠিকনা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিনে ৭০ থেকে ১০০ বার তোওবা করতেন। আপনি যদি সালাতের দুই সিজদার মাঝখানে এই দুয়াটা পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলেন তাহলে দিনে যত রাকাত করে সালাত পড়বেন, তত বারই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া হবে। আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়ার একটা উপায় হচ্ছে বেশি বেশি করে নিয়মিত তোওবা ও ইস্তিগফার করা (ক্ষমা করা)।
.
এছাড়া দুই সিজদার মাঝখানে আরেকটা ছোট্ট সুন্দর দুয়াঃ
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي، وَارْحَمْنِي، وَاهْدِنِي، وَاجْبُرْنِي، وَعَافِنِي، وَارْزُقْنِي، وَارْفَعْنِي
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মাগফিরলী, ওয়ারহা’মনী, ওয়াহদিনী, ওয়াজবুরনী, ওয়াআ’ফিনি, ওয়ারযুক্বনী, ওয়ারফা‘নী।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আমার প্রতি দয়া করুন, আমাকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন, আমার সমস্ত ক্ষয়ক্ষতি পূরণ করে দিন, আমাকে নিরাপত্তা দান করুন, আমাকে রিযিক দান করুন এবং আমার মর্যাদা বৃদ্ধি করুন”। আবূ দাউদঃ ৮৫০, তিরমিযীঃ ২৮৪, ইবন মাজাহঃ ৮৯৮। শায়খ আলবানীর মতে হাদীসটি সহীহ।
বিঃদ্রঃ এই দুয়াটা কম-বেশি বিভিন্ন ভাবে বর্ণনা আছে, সবগুলো সহীহ – তবে এখানে যেটা দেওয়া আছে এটা সবচাইতে বড় যেখানে সবগুলো দুয়া একসাথে আছে। এটা করলে সবগুলো দুয়াই করা হলো।
এবার আল্লাহু আকবার বলে দ্বিতীয় সিজদা করবেন, আগের মতো তাসবীহ পড়বেন। ইচ্ছা হলে নিজস্ব দুয়া করতে পারবেন। আপনার ইচ্ছা হলে যেকোন এক বা একাধিক সিজদাতে, বা সবগুলো সিজদাতেই যত ইচ্ছা দুয়া করতে পারবেন, কোন সমস্যা নেই।
কোন মন্তব্য নেই