Header Ads

Header ADS

ঘাড় মাসাহ করার দলিল

ওযুতে ঘাড় মাসাহ করার দলিলের পর্যালোচনা

পোষ্টটি সংগ্রহীত ও এডিটকৃত।

مَنْ مَسَحَ قَفَاهُ مَعَ رَأْسِهِ وُقِيَ الْغُلَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ

যে গর্দানসহ মাথা মাসেহ করবে সে কিয়ামতের দিন গলায় বেড়ী পড়ানো থেকে মুক্ত থাকবে ।

হাদীসটি এসেছে কাসিম বিন সালমা এর কিতাব আত তাহারাত ( القاسم بن سلام في كتاب الطهور) এর بَابُ الِاسْتِعَانَةِ بِالْأَصَابِعِ فِي مَسْحِ الْأُذُنَيْنِ وَمَسْحِ الْقَفَا এর ৩৬৮ নং এ । হাদীসটির সনদ -

فَإِنَّ عَلِيَّ بْنَ ثَابِتٍ , وَعَبْدَ الرَّحْمَنِ حَدَّثَانَا عَنِ الْمَسْعُودِيِّ، عَنِ الْقَاسِمِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ مُوسَى بْنِ طَلْحَةَ

হাদীসের সনদে উপস্থিত আলী বিন সাবিত (عَلِيَّ بْنَ ثَابِتٍ) সম্পর্কে ইবনু হাজার আল-আসকালানী বলেন , তিনি সত্যবাদী তবে তার শিয়া মতালম্বী হওয়ার ব্যাপারে অভিযোগ রয়েছে । ইমাম যাহাবী তাকে সিকাহ বলেছেন । (তাহজীবুল কামাল , রাবী নং ৪০৩৩)

সনদের আরেকজন রাবী আল-মাসঊদী (الْمَسْعُودِيِّ) সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, তিনি সিকাহ । ইবনু নুমায়র বলেন তিনি সিকাহ তবে শেষ বয়সে হাদীস বর্ণনায় সংমিশ্রন করেছেন । আহমাদ বিন হাম্বাল বলেন, তিনি সিকাহ তবে বাগদাদে হাদীস বর্ণনায় সংমিশ্রন করেছেন । মুহাম্মাদ বিন সাদ বলেন , তিনি সিকাহ তবে মৃত্যুর পূর্বে হাদীস বর্ণনায় সংমিশ্রন করেছেন । আলী ইবনুল মাদীনী তাকে সিকাহ বলেছেন ।
(তাহজীবুল কামাল , রাবী নং ৩৮৭২)

আর দ্বিতীয় কথা , ইমাম ইবনে হাজার (রহ) নায়লুল আত্তার (نيل الأوطار) এর ১৯৮ নং হাদীসের ব্যাখায় উল্লেখ করেছেন ,

فيحتمل أن يقال هذا ، وإن كان موقوفا فله حكم الرفع ، لأن هذا لا يقال من قبيل الرأي فهو على هذا مرسل انتهى

এ কথাও বলা যেতে পারে যদিও তা মাওকুফ হয় , তবুও মারফু এর মানে । যেহেতু তার দ্বারা বলা যায় না সুতরাং তা এই হিসাবে মুরসাল ।

বোঝা গেল সনদে ২ জন দঈফ রাবীর জন্য হাদীসটি গ্রহণযোগ্য নয় এবং হাদীসটি মুরসালও বটে। মুরসাল হাদীস কিভাবে গ্রহণযোগ্য হয়?

আসুন মরসাল হাদীস সম্বন্ধে ইমামদের অভিমতগুলো পর্যালোচনা করি।

ইমাম মুসলিম রহ. ও মুহাদ্দিসগণের অভিমত

ইমাম মুসলিম রহ. বলেন, .... আর মুরসাল রেওয়ায়েতসমূহের ব্যাপারে আমাদের এবং মুহাদ্দিসীনে কেরামের অভিমত হচ্ছে, মুরসাল হাদীস হুজ্জাত (দলিল) হিসেবে পরিগণিত নয়। সূ্ত্র: সহীহ মুসলিম , মুকদ্দমা, ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত, পৃষ্ঠা-৭৫)

২/ ইমাম  তিরমিজী রহ. ও অধিকাংশ মুহাদ্দিসগণের অভিমত ইমাম তিরমিজী রহ. বলেন,

ﻭﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﺇﺫﺍ ﻛﺎﻥ ﻣﺮﺳﻼً ﻓﺈﻧﻪ ﻻ ﻳﺼﺢ ﻋﻨﺪ ﺃﻛﺜﺮ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻭﻗﺪ ﺿﻌﻔﻪ ﻏﻴﺮ ﻭﺍﺣﺪ ﻣﻨﻬﻢ

হাদিস মুরসাল হলে নিশ্চয় সেটি অধিকাংশ মুহাদ্দিসের নিকট সহীহ নয়, একাধিক মুহাদ্দিস এটিকে (মুরসাল হাদিসকে) যইফ বলেছেন। সূত্র: ইলালুস সগীর, (ইমাম তিরমিযী রহ.), পৃষ্ঠা-১৫।

৩/ ইমাম হাকিম রহ. ও মুহাদ্দিসগণের অভিমত

ইমাম হাকিম রহ. বলেন...আহলুল হাদিসগণ ও হিজাজের ফুকাহাদের নিকট মুরসাল হাদিস যঈফ ও হুজ্জাত বা দলিল নয় এবং এটিই হচ্ছে সাঈদ বিন মুসায়েব, মুহাম্মাদ বিন মুসলিম জুহরী, মালিক বিন আনাস, আবদুর রহমান আওজায়ী, মুহাম্মাদ বিন ইদ্রিস শাফিঈ, আহমাদ বিন হানবাল ও পরবর্তী মাদিনার ফকিহগণের মত এবং তাদের নিকট দলিল হচ্ছে আল্লাহর কিতাব ও নাবী সা: এর সুন্নাহ। সূত্র: আল মাদখাল , মুরসাল সংক্রান্ত আলোচনার অধ্যায়, পৃষ্ঠা নং-৬৬।

মনে রাখা প্রয়োজন আলিমগণের মতামত দলিল নয়। দলিল হচ্ছে তাই যা রয়েছে কুরআন ও সুন্নাহতে যার থেকে সরাসরি অথবা ইংগিত নিয়ে মুহাদ্দিসগণ মতামত পেশ করে থাকেন। এবার আমরা মুরসাল হাদিস গ্রহণযোগ্য না হওয়া সংক্রান্ত দলিলগুলো পেশ করব। শয়তান মানুষের রূপ ধরে হাদিস বলে থাকে, বিধায় তাবেয়ী ও রসূল সা: এর মাঝের ব্যক্তিটি শয়তানও হতে পারে।

আমের ইবনে আবদা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেছেনঃ শয়তান মানুষের আকৃতিতে লোকদের কাছে এসে মনগড়া হাদীস বর্ণনা করে। পরে লোকেরা সেখান থেকে আলাদা হয়ে চলে যায়, অতঃপর তাদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি বলে, আমি এমন এক ব্যক্তিকে হাদীস বলতে শুনেছি, তার মুখ দেখলে চিনবো কিন্তু তার নাম কি তা জানি না। সূত্র: সহীহ মুসলিম, মুকদ্দমা, পৃষ্ঠা নং-৪৩।

যেহেতু শয়তান মানুষের রূপ ধরে হাদিস বলে চলে যায়, তাই তাবেয়ী ও রসূলুল্লাহ সা: এর মাঝখানে কে আছে তা জানা অতীব জরুরী। হতে পারে সে মিথ্যুক বা হতে পারে সে
শয়তান।

তাছাড়া হাদীস সহীহ হওয়ার শর্ত হচ্ছে রাবী আদিল (ন্যায়পরায়ণ) হওয়া । মধ্যকার বারীর পরিচয় যেহেতু জানাই যায় না তাই ন্যায়পরায়ণও প্রমাণ হচ্ছে না। বিধায় মুরসাল হাদিস গ্রহণযোগ্য নয়।

সুতরাং, আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, মুরসাল হাদীস গ্রহণীয় নয়।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.