গোপন শির্ক বা লোক দেখানো আমল করা
#জ্বি_জনাব_আপনাকেই_বলছি........!
চারদিকে শুধু ফিতনা আর ফিতনা!অনেকেই এক গর্ত থেকে বহু কষ্টে উঠে আসলেও আবার অন্য গর্তে গিয়ে পড়ে যাচ্ছে! ভাল মানুষের বেশেও আমরা আজ চরম ধোকাবাজিতে লিপ্ত! সামান্য জনপ্রিয়তা হাছিলের জন্য কত কিছুই না করছি অথচ এর আখেরি ফলাফল কিন্তু জিরো ই ! দ্বীনের খেদমতের নামে হোক আর দুনিয়ার নামে হোক আমাদের চারিত্রিক অদপতন যে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে তা কিন্তু দৃশ্যমান! বেদ্বীনদের কথা না হয় বাদ ই দিলাম, বহু দ্বীনদার মানুষ ই আজকাল দ্বীনের প্রচার প্রসার কে বাণিজ্যিক ফয়দা লুটার উৎস বানিয়ে ফেলেছে! "ইখলাস " যেন এখন সোনালি হাস!
#পর_সমাচার,
যেকোন কিছু করার ইরাদাকে (ইচ্ছাকে) “নিয়ত” বলা হয়। নিয়ত ভালো ও খারাপ, দুটোই হতে পারে। কোন ব্যক্তি যখন শুধুমাত্র আল্লাহ সুবহা’নাহু তাআ’লার উদ্দেশ্যে কোনো ইবাদত করে সেটাকে “ইখলাস” বলা হয়। আর কেউ যখন লোক দেখানো বা অন্য কোনো উদ্দশ্যে হাসিলের জন্য “ইবাদত” করে, যেমন- দুনিয়াবী কোন স্বার্থ হাসিল করা, টাকা পয়সা পাওয়া, আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে খুশি করা, মানুষ ধার্মিক বলুক বা প্রশংসা করুক, এমন খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে কোন ইবাদত করলে সেটাকে “রিয়া” বলা হয়। সহজ ভাষায় – রিয়া হচ্ছে লোক দেখানো ইবাদত করা। নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাত, ইসলাম বিষয়ক কিতাব লেখা, ব্লগে ইসলামিক আর্টিকেল লেখা,ফেবুতে ইসলামের ভিবিন্ন বিষয় নিয়ে স্টাটাস লেখাসহ - যেকোনো ইবাদত আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি বা উদ্দেশ্য ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে করলে সেটা আল্লাহ তাআ’লা কস্মিনকালেও কবুল করবেন না। বরং, এইরকম লোক-দেখানো বা অন্যকে খুশি করার জন্য ইবাদত করার কারণে এটা – “শিরক” এবং এর প্রতিদানে সে যদি তওবা না করে তাহলে তাকে কঠোর শাস্তি দিবেন। এর জন্য পূর্বেকার সলফে সালেহীনগন কোনো আমল করার পূর্বে ভালোভাবে চিন্তা করতেন তাদের “নিয়ত” বিশুদ্ধ আছে কিনা বা ইবাদতে ‘ইখলাস’ আছে কিনা।
আজকাল অনেক মানুষের মাঝে ই রিয়া নামক রোগ টা বিদ্যমান!শুধু কিছু লাইক/কমেন্ট /শেয়ার/ভিউয়ার/সাবস্ক্রিবার বাড়ানোর জন্য এরা ফেসবুক/ইউটিউবে এই কাজ গুলো করে থাকে!স্রৌতের সাথে গা ভাসিয়ে শুধু বেদ্বীনরাই নয় বরং কিছু দ্বীনদার মানুষও এই ফিত্নায় জড়িয়ে গেছে!
জাস্ট একটা এক্সাম্পল দিচ্ছি-
যারা মোটামুটি মাঝেমধ্যে ইউটিউবে ঘোরাঘুরি করেন তারা এই বিষয় টি নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন যা আজ থেকে ৫/৭ বছর আগেও তেমন দেখা যেত না অথচ এখন তা মহামারি আকার ধারণ করেছে!তা হল-
ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠা ইউটিউব চ্যানেল গুলোতে আপলোডকৃত ভিবিন্ন ইসলামিক লেকচার/ওয়াজের টাইটেল ফিতনা!
কি সহিহ আকিদার আর কি বাতিল আকিদার সবাই
কে - কার চাইতে বেশি আকর্ষনীয় ও নজরকাড়া টাইটেল দিতে পারে সে প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত!!! (আউজুবিল্লাহ)
আপনি কি মনে করে এরা এসব দ্বীনের খাতিরে করছে?
মোটেও না! এগুলো শুধু মাত্র ভিউয়ার /সাবস্ক্রিবার বাড়ানোর কৌশল, যাতে করে কিছু ডলারও ইনকাম করা যায়!!!
সবচেয়ে মজার বিষয় হল-কিছু কিছু টাইটেল এতই আপত্তিকর যে, বক্তাকে হাইলাইটস করতে গিয়ে আপলোডার ই উল্টো বেইজ্জতি করে দিচ্ছে পাব্লিকের কাছে!
খেয়াল করুন কয়েকটা টাইটেল দিচ্ছি----
@বক্তা নয় এ যেন ওয়াশিং মেশিন!
@যে ওয়াজ শুনে হাসিনার মাথা খারাপ হয়ে গেছে!
@ ৭১ এর ভাষনের মত গর্জন দিলেন যে বক্তা!
@এই ওয়াজ শুনে ওমুকের প্যান্ট খারাপ হয়ে গেছে!
@বক্তা নয় এ যেন এ্যাটম বোম!
@ যে ওয়াজে লক্ষ মানুষের সমাগম(অথচ এক হাজারও হবে কিনা সন্দেহ আছে)!
@ এই ওয়াজ না শুনলে চরম মিস করবেন!
@গত বছরের সবচেয়ে গরম ওয়াজ!
@২০১৮ সালের সেরা ওয়াজ (কোন জরীপ ছাড়াই)!
@সরকারকে বাশ দিলেন ওমুক মুফতি সাহেব!
@এই ওয়াজ টা আপনার জীবন পাল্টে দিবে!
@পুরো বাংলাদেশ কাপালেন এই বক্তা!
@যে ওয়াজ শুনে সবাই কেদেছে!😃😃😃
এছাড়া আরও অনেক আছে! এসব টাইটেল যে শুধুমাত্র বিদাতিরাই ইউজ করছে তা নয় বরং কিছু সহিহ আকিদার দাবিদার ভাইয়েরাও ইদানীং ওদের দেখাদেখি ইউজ করা শুধু করছে!
একটু নিরপেক্ষ দৃস্টিতে ভাবুনতো -এগুলো কি কোন টাইটেল হলো? এর মাধ্যমে কি একজন বক্তাকে ছোট করা হচ্ছেনা?
ভাইরে! আপনার উদ্দেশ্য যদি ইখলাসের সহিত আলেমদের বক্তব্য প্রচার করাই হয়, তাহলে টাইটেল বিহীন দিলেও তার জন্য আল্লাহতালা আপনাকে পরকালে সম্মানিত করবেন(কারন আল্লাহ অন্তর্যামী)
আর যদি হাজারো আকর্ষনীয়/সুন্দর টাইটেল দেন কিন্তু তাতে ইখলাস না থাকে এবং অর্থ/সাবস্ক্রিবার /ভিউয়ার বাড়ানোর ধান্ধায় মেতে থাকেন তাহলে দুনিয়াতেই আপনার নিয়ত অনুযায়ী তা হয়ত পেয়ে যাবেন কিন্তু আখিরাতে কিছুই পাবেন না! (যেহেতু আপনি দুনিয়া কে প্রাধান্য দিয়েছিলেন)!
সুতরাং কোনটাকে প্রাধান্য দিবেন সেই সিদ্বান্ত আপনার হাতেই ছেড়ে দিলাম!
ইখলাস না থাকার পরিণতি সম্পকে আল্লাহ তা'লা কোরআনুল কারীমে বলেন “(আমি ছাড়া অন্যের সন্তুষ্টির জন্য) তারা যেসব আমল করবে, আমি তাদের কৃতকর্মের প্রতি মনোনিবেশ করব, অতঃপর সেইগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করে দেব।” সুরাহ আল-ফুরকানঃ ২৩।
সর্বশেষ,নবী করীম সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর একটি হাদিস দিয়েই আজকের মত ইতি টানছি---
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “আমি তোমাদের ব্যাপারে ছোট শিরক থেকে খুব ভয় করছি। সাহাবীরা বললেন – ইয়া রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম! ছোট শিরক কি? রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তা হলো “রিয়া” বা লোক দেখানো ইবাদত। যেদিন আল্লাহ তাআ’লা বান্দাদের আমলের পুরস্কার প্রদান করবেন, সেদিন রিয়াকারীদেরকে বলবেনঃ যাও, দুনিয়াতে যাদেরকে দেখানোর জন্য আমল করতে, তাদের কাছে যাও। দেখো তাদের কাছ থেকে কোনো পুরস্কার পাও কিনা?”
মুসনাদে আহমাদ, সহীহ ইবনে খুজায়মা।
শায়খ আলবানী হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন।
কোন মন্তব্য নেই