গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর-আত তাহরীক থেকে
প্রশ্ন (১/২০১): ‘ডেসটিনি ২০০০ প্রাইভেট লিমিটেড’ যে কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং Multi Level Marketingপদ্ধতিতে যে লভ্যাংশ মানুষকে দিচ্ছে তা কি শরী‘আত সম্মত?
-আসাদুল ইসলাম
বংশাল, ঢাকা।
উত্তরঃ মৌলিকভাবে দু’টি পদ্ধতিতে যৌথ ব্যবসা করা শরী‘আত সম্মত। একটির নাম ‘মুশারাকাহ’ (مشاركة) অর্থাৎ শরীকানা ব্যবসা। এতে যার যেমন অর্থ থাকবে, সে তেমন লভ্যাংশ পাবে (আবুদাঊদ হা/৪৮৩৬; সনদ ছহীহ, বুলূগুল মারাম হা/৮৭০; নায়ল হা/২৩৩৪-৩৫)। অপরটির নাম ‘মুযারাবাহ’ (مضاربة) অর্থাৎ একজনের অর্থ নিয়ে অপর জন ব্যবসা করবে। এ পদ্ধতিতে লভ্যাংশ তাদের মাঝে চুক্তিহারে বন্টিত হবে (দারাকুৎনী হা/৩০৭৭; মুওয়াত্ত্বা হা/২৫৩৫; ইরওয়াউল গালীল হা/১৪৭২, ৫/২৯২ পৃঃ; বুলূগুল মারাম হা/৮৯৫, মওকূফ ছহীহ)। প্রশ্নে উল্লেখিত ব্যবসা এ দু’য়ের অন্তর্ভুক্ত নয়।
সঊদী আরবের জাতীয় গবেষণা ও ফাতাওয়া বিভাগের স্থায়ী কমিটি (লাজনা দায়েমাহ) এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানিয়েছে যে, পিরামিড স্কীম, নেটওয়ার্ক মার্কেটিং বা এমএলএম যে নামেই হোক না কেন এ ধরনের সকল প্রকার লেনদেন নিষিদ্ধ। কেননা এর উদ্দেশ্য হ’ল, কোম্পানীর জন্য নতুন নতুন সদস্য সৃষ্টির মাধ্যমে কমিশন লাভ করা, পণ্যটি বিক্রি করে লভ্যাংশ গ্রহণ করা নয়। এ কারবার থেকে বহুগুণ কমিশন লাভের প্রলোভন দেখানো হয়। স্বল্পমূল্যের একটি পণ্যের বিনিময়ে এরূপ অস্বাভাবিক লাভ যে কোন মানুষকে প্ররোচিত করবে। আর এতে ক্রেতা-পরিবেশকদের মাধ্যমে কোম্পানী এক বিরাট লাভের দেখা পাবে। মূলতঃ পণ্যটি হ’ল কোম্পানীর কমিশন ও লাভের হাতিয়ার মাত্র।
বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এ ধরনের নেটওয়ার্ক ব্যবসা অসম মূল্য নির্ধারণ ও অতিরঞ্জিত আয়ের প্রলোভন দেখানোর কারণে অভিযুক্ত হয়েছে। আমেরিকার ফেডারেল ট্রেড কমিশন (FTC) ২০০৮ সালের মার্চ মাসে তাদের প্রস্তাবিত ব্যবসায় সুযোগ সম্বন্ধীয় তালিকা থেকে এমএলএম কোম্পানীগুলোর নাম বাদ দিয়েছে। সংস্থাটি গ্রাহকদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, নতুন সদস্য সংগ্রহের মাধ্যমে কমিশন গ্রহণ করার এই রীতি (এমএলএম) বিশ্বের অধিকাংশ দেশে পিরামিড স্কীম পদ্ধতির ন্যায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে (দ্রঃ Multi-level marketing-উইকিপিডিয়া)। তত্ত্বগতভাবেও এ ধরনের মার্কেটিং বিষয়ে অনেক আপত্তি রয়েছে। কেননা এ মার্কেটিং-কে বলা হয়েছে, ‘MLM is like a train with no brakes and no engineer headed full-throttle towards a terminal.’ অর্থাৎ ‘সর্বোচ্চ গতিতে স্টেশনমুখী একটি ট্রেনের মত যার কোন ব্রেক নেই, নেই কোন চালক’ (দ্রঃ www.vandruff.com/mlm.html)।
সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকেও এ ‘ব্যবসা’ সমর্থন করা যায় না। কেননা একজন গ্রাহককে তার আত্মীয় ও বন্ধু-বান্ধবদের বশীভূত করে পণ্য বিক্রয় করতে বলা হয়। ফলে গ্রাহক ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে মানুষের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে। মানুষের সাথে অন্তরঙ্গ আত্মীয়তা ও বন্ধুত্বের সম্পর্ককে সে ব্যবসায়িক স্বার্থ চরিতার্থের কেন্দ্রে পরিণত করে। এ সম্পর্ক তখন হয়ে যায় যান্ত্রিক। নিষ্কলুষ বন্ধুত্বের স্থলে তখন সন্দেহ আর সংকীর্ণতাবোধ স্থান করে নেয়। নিজ গৃহ পরিণত হয় মার্কেট প্লেসে। যে কোন সুস্থ বিবেকসম্পন্ন লোক এ কাজে ঘৃণাবোধ করবে।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, হালাল স্পষ্ট, হারামও স্পষ্ট। এর মধ্যবর্তী বিষয়সমূহ অস্পষ্ট, যা অনেক মানুষ জানে না। অতএব যে ব্যক্তি সন্দিগ্ধ বস্ত্তসমূহ থেকে বেঁচে থাকবে, সে ব্যক্তি তার দ্বীন ও সম্মানকে পবিত্র রাখলো। আর যে ব্যক্তি সন্দিগ্ধ কাজে লিপ্ত হ’ল, সে হারামে পতিত হ’ল (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৭৬২)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, সন্দিগ্ধ বিষয় পরিহার করে নিঃসন্দেহ বিষয়ের দিকে ধাবিত হও। কেননা সত্যে রয়েছে প্রশান্তি এবং মিথ্যায় রয়েছে সন্দেহ’ (তিরমিযী হা/২৫৮১; সনদ ছহীহ, মিশকাত হা/২৭৭৩)।
অতএব আমাদের স্পষ্ট সিদ্ধান্ত এই যে, প্রশ্নে উল্লেখিত নামে বা অন্য নামে প্রচলিত এম.এল.এম ব্যবসা সমূহ শরী‘আত সম্মত হবে না। জান্নাত পিয়াসী মুমিনকে এসব থেকে বেঁচে থাকতে হবে (বিস্তারিত দেখুনঃ আত-তাহরীক, ডিসেম্বর ২০০৮ প্রশ্নোত্তর : ২/৮২ ডেসটিনি২০০০ ব্যবসা কি জায়েয?
প্রশ্ন (২/২০২) : দিগন্ত টেলিভিশনে কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জনৈক অধ্যাপক প্রশ্নোত্তর পর্বে বলেছেন, তিন রাক‘আত বিতর মাগরিবের ছালাতের ন্যায় পড়ারও ছহীহ হাদীছ আছে। সুতরাং এ নিয়ে ফেৎনা করা সমীচীন নয়। উক্ত বক্তব্য কি সঠিক?
-নকীব ইমাম কাজল
৪০ লেক সার্কাস কলাবাগান, ঢাকা।
উত্তর : উক্ত বক্তব্য সঠিক নয়। কারণ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা মাগরিবের ছালাতের ন্যায় (মাঝখানে বৈঠক করে) বিতর আদায় করো না’ (দারাকুৎনী হা/১৬৩৪-৩৫; ছহীহ ইবনে হিববান হা/২৪২০; তুহফাতুল আহওয়াযী ২য় খন্ড, পৃঃ ৪৫৩)। পক্ষান্তরে মাগরিবের ছালাতের ন্যায় বিতর পড়ার পক্ষে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ (يَحْيَى بْنُ زَكَرِيَّا هَذَا يُقَالُ لَهُ ابْنُ أَبِى الْحَوَاجِبِ ضَعِيفٌ. وَلَمْ يَرْوِهِ عَنِ الأَعْمَشِ مَرْفُوعًا غَيْرُهُ).(দারাকুৎনী হা/১৬৩৭)।
প্রশ্ন (৩/২০৩) : জানাযার ছালাত আদায়ের পর দলবদ্ধভাবে হাত তুলে দো‘আ করা এবং দাফন করার পর পুনরায় হাত তুলে দো‘আ করা কী শরী‘আত সম্মত?
-দিদার বখ্শ
খানপুর, রাজশাহী।
উত্তর : জানাযা হ’ল মুসলিম মাইয়েতের জন্য একমাত্র দো‘আর অনুষ্ঠান। এর বাইরে সবকিছু বিদ‘আত। প্রশ্নে বর্ণিতউভয়টিই বিদ‘আতী প্রথা। বিশেষ করে জানাযার ছালাত আদায়ের পর হাত তুলে দো‘আ করার নিয়মটি সম্প্রতি চালু হয়েছে। উক্ত প্রথার প্রমাণে কোন দলীল নেই। তবে দাফনের পর সকলে ব্যক্তিগতভাবে মাইয়েতের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে। এ সময় ‘আল্লাহুম্মাগফিরলাহু ওয়া ছাবিবতহু’ বলতে পারে (আবুদাঊদ হা/৩২২১)। এছাড়া আল্লাহুম্মাগফিরলাহু ওয়ার হামহু.. মর্মে বর্ণিত দো‘আটিও পড়তে পারে (মুসলিম হা/৩৩৬)।
প্রশ্ন (৪/২০৪) : কবর কী পরিমাণ গভীর করতে হবে? পুরুষ ও মহিলার কবরের মধ্যে কোন পার্থক্য আছে কি?
-ফযলুর রহমান
গড়েরকান্দা, সাতক্ষীরা।
উত্তর : যতটুকু গভীর করা প্রয়োজন ততটুকু গভীর করতে হবে। কারণ হাদীছে কবর গভীর করার কথা বলা হয়েছে (বুখারী, মিশকাত হা/১৬৯৫)। কিন্তু কতটুকু করতে হবে তা বলা হয়নি। এতে নারী-পুরুষের কোন পার্থক্য নেই (মুগনী ২য় খন্ড, পৃঃ ৪৯৭; মির‘আত হা/১৭১৭)।
প্রশ্ন (৫/২০৫) : যঈফ হাদীছ তো সন্দেহযুক্ত। তাই যঈফ হাদীছের উপর আমল করা যাবে না। কিন্তু ইমাম তিরমিযী, আবুদাঊদ প্রমুখ তাদের স্ব স্ব গ্রন্থে যঈফ হাদীছ উল্লেখ করেছেন। কেউ যদি তা দেখে যঈফ হাদীছের উপর আমল করে তবে দায়ী কে হবে? কোন্ কোন্ ক্ষেত্রে যঈফ হাদীছের উপর আমল করা যায়?
-আব্দুল্লাহ
কাঞ্চন, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।
উত্তর : ইমাম তিরমিযী, আবুদাঊদ প্রমুখ মুহাদ্দিছগণ স্ব স্ব গ্রন্থে যে সমস্ত যঈফ হাদীছ উল্লেখ করেছেন এবং যঈফ বলে অভিহিত করেছেন সেগুলো মূলতঃ জনসাধারণকে যঈফ হাদীছ হতে সতর্ক করার জন্য। এরপরও যারা সেগুলোর প্রতি আমল করবে তারাই দায়ী হবে। তবে কিছু হাদীছ যঈফ হওয়ার পরও তারা সেগুলো সম্পর্কে কোন মন্তব্য করেননি। কারণ উক্ত হাদীছগুলোর সমর্থনে অন্যত্র ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে।
শর্ত সাপেক্ষে যঈফ হাদীছের প্রতি আমল করা যাবে মর্মে পূর্ববর্তী কতিপয় বিদ্বান শিথিলতা প্রদর্শন করেছেন। কিন্তু ছাহাবী, তাবেঈ ও মুহাদ্দিছগণ যে সমস্ত মূলনীতি এবং শর্ত আরোপ করেছেন তাতে কোন ক্ষেত্রেই যঈফ হাদীছ গ্রহণযোগ্য নয়। যেমন ইমাম বুখারী, মুসলিম, ইয়াহইয়া ইবনু মাঈন, ইবনুল আরাবী মালেকী, ইবনু হাযম, ইবনু তায়মিয়াহ প্রমুখ শীর্ষস্থানীয় মুহাদ্দিছগণ সকল ক্ষেত্রে যঈফ হাদীছ বর্জন করেছেন (ক্বাওয়াইদুত তাহদীছ, পৃঃ ১১৩ )। শায়খ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) বলেন, ‘নিশ্চয়ই যঈফ হাদীছ অতিরিক্ত ধারণার ফায়েদা দেয় মাত্র। তবে এ বিষয়ে সকলে একমত যে, তার উপর আমল করা বৈধ নয়। সুতরাং যে ব্যক্তি বলে, ফযীলত সংক্রান্ত যঈফ হাদীছের উপর আমল করা যাবে, তাকে অবশ্যই দলীল পেশ করতে হবে। কিন্তু তাতো অসম্ভব’ (তামামুল মিন্নাহ, পৃঃ ৩৪)। অতএব যঈফ হাদীছ কোন ক্ষেত্রেই আমলযোগ্য নয়।
প্রশ্ন (৬/২০৬) : আমাদের এলাকায় জানাযার সময় মৃত ব্যক্তিকে সামনে রেখে আধা ঘণ্টা বা তার চেয়েও বেশী সময় ধরে বিভিন্ন জন বক্তব্য দেন। এর শারঈ বিধান জানিয়ে বাধিত করবেন।
-তৈয়বুর রহমান
গোছা, মোহনপুর, রাজশাহী।
উত্তর : উক্ত প্রথা শরী‘আত সম্মত নয়। মৃত ব্যক্তির ঋণ পরিশোধ সম্পর্কে ইমাম কথা বলতে পারেন (বুখারী, মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২৯০৯, ২৯১৩)। জানাযার আগে-পরে ‘সকলে ব্যক্তিগতভাবে মাইয়েতের গুণাবলী বর্ণনা করবে। এতে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হবে। কেননা মুমিন বান্দাগণ এ পৃথিবীতে আল্লাহ্র জন্য সাক্ষী স্বরূপ’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১৬৬২, ‘জানাযা’ অধ্যায়)। উল্লেখ্য যে, জানাযার পূর্বে উপস্থিত সকলের সমস্বরে ‘মাইয়েত ভাল ছিলেন’ বলে সাক্ষ্য দেওয়ার রেওয়াজটি নিন্দনীয় বিদ‘আত (তালখীছ পৃঃ ২৬; ছালাতুর রাসূল (ছাঃ), পৃঃ ২২৪)।
প্রশ্ন (৭/২০৭) : জামা‘আতে ছালাত রত অবস্থায় ওযূ নষ্ট হয়ে গেলে করণীয় কি?
-যাকির মজুমদার
তিলনাপাড়া, খিলগাঁও, ঢাকা।
উত্তর : উক্ত অবস্থায় ছালাত ছেড়ে দিবে এবং ওযূ করে জামা‘আতে শরীক হবে (মুস্তাদরাক হাকেম হা/৬৫৫, হাদীছ ছহীহ)। সালামের পর বাকী ছালাত পূর্ণ করবে। পূর্বে আদায়কৃত ছালাত ধরবে না। উল্লেখ্য, পূর্বের ছালাত ঠিক থাকবে মর্মে ইবনু মাজাহতে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা যঈফ (যঈফ ইবনু মাজাহ হা/১২১২)।
প্রশ্ন (৮/২০৮) : কোন দুর্যোগ কিংবা শত্রু কর্তৃক আক্রান্ত হওয়ার আশংকা থাকলে ফরয ছালাতের শেষ রাক‘আতে রুকূর পর সবাই মিলে হাত তুলে দো‘আ করা যাবে কি?
-মুজীবুর রহমান
মান্দা, নওগাঁ।
উত্তর : করা যাবে। উক্ত পদ্ধতিতে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতেই দো‘আ করা যাবে। একে কুনূতে নাযেলাহ বলা হয় (আবূদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/১২৯৮)।
প্রশ্নঃ (৯/২০৯): মুহাম্মাদ (ছাঃ) মি‘রাজে গিয়ে বায়তুল মুক্বাদ্দাসে সমস্ত নবী-রাসূলের ইমামতি করেছিলেন। উক্ত বক্তব্যের প্রমাণ জানতে চাই। উক্ত ছালাত সুন্নাত ছিল না ফরয ছিল?
-আব্দুল কাহ্হার
বিরল, দিনাজপুর।
উত্তর : উক্ত বক্তব্য সঠিক। হাদীছটি ছহীহ মুসলিমে (হা/১৭২ ‘ঈমান’ অধ্যায় ৭৫ অনুচ্ছেদ) হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত হয়েছে। হাফেয ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন, এটিই সম্ভাবনাযুক্ত যে, এটি ছিল ফজরের ছালাত এবং এটি স্পষ্ট যে, এটি ছিল মি‘রাজ থেকে ফেরার পথে বায়তুল মুক্বাদ্দাস মসজিদে। অতঃপর ছালাত শেষে তিনি মসজিদ থেকে বেরিয়ে বোরাকে চড়ে গালাসের অন্ধকারেই মক্কায় ফিরে আসেন (তাফসীর ইবনে কাছীর ইসরা ১ম আয়াতের তাফসীর শেষে উপসংহার)।
প্রশ্নঃ (১০/২১০) : মানুষকে আল্লাহ তা‘আলা কী দ্বারা সৃষ্টি করেছেন? কোন আয়াতে এসেছে পানি দ্বারা (ফুরক্বান ৫৪)। আবার কোন আয়াতে এসেছে, মাটি দ্বারা (ত্বোয়াহা ৫৫; রহমান ১৪)। সঠিক সমাধান দানে বাধিত করবেন।
-সাঈদুর
কাযীপাড়া, বিরল, দিনাজপুর।
উত্তর : মানুষকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। সূরা ফুরক্বানে যেখানে মানুষকে পানি দ্বারা সৃষ্টি করার কথা বলা হয়েছে তার অর্থ বীর্য (ইবনু কাছীর)। প্রকৃতপক্ষে তা তৈরী হয়েছে মাটি হ’তে উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্যের নির্যাস হ’তে।
প্রশ্ন (১১/২১১) : জনৈক অধ্যাপক বলেন, ছাহাবীগণের মধ্যে আলী (রাঃ) সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি ছিলেন। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘আমি জ্ঞানের শহর আর আলী তার দরজা’। বক্তব্যটি কি সঠিক?
-মুনীরুল ইসলাম
বিনোদপুর, রাজশাহী।
উত্তর : বর্ণনাটি জাল বা বানোয়াট (যঈফ তিরমিযী হা/৩৭২৩; মিশকাত হা/৬০৮৭; যঈফুল জামে‘ হা/১৩১৩)।
প্রশ্ন (১২/২১২) : নিয়ামুল কুরআন ও মকছূদুল মুমিনীন বই দু’টি কি নির্ভরযোগ্য? এগুলি পড়ে আমল করা যাবে কি?
-যাকির
খিলগাঁও, ঢাকা।
উত্তর : মোটেই নির্ভরযোগ্য নয়। এ সমস্ত বই ক্রয় করা যাবে না, পড়াও যাবে না। কারণ নিয়ামুল কুরআনে এমন কিছু কল্পিত দরূদ আছে যেগুলো পড়লে শিরক হবে। অনুরূপভাবে মকছুদুল মুমিনীন বইটি জাল, যঈফ, মিথ্যা ও বানোয়াট কাহিনীতে ভরপুর।
প্রশ্ন (১৩/২১৩) : হাদীছে এসেছে, কোন নাবালেগ সন্তান মারা গেলে ক্বিয়ামতের দিন সে তার পিতা-মাতাকে কাপড় ধরে টেনে জান্নাতে নিয়ে যাবে। প্রশ্ন হল, সেদিন তো সবাই নগ্ন অবস্থায় থাকবে, কাপড় ধরে টানবে কিভাবে?
-আব্দুল্লাহ ইসহাক
নজরপুর, নরসিংদী।
উত্তর : ক্বিয়ামতের মাঠে সকল মানুষকে নগ্নাবস্থায় একত্রিত করা হবে (বুখারী হা/৬৫২৭)। তবে পরবর্তীতে অনেককে কাপড় পরানো হবে। আর যাদেরকে কাপড় পরানো হবে ইবরাহীম (আঃ) হবেন তাদের মধ্যে প্রথম ব্যক্তি (বুখারী হা/৪৫৫৪)। এতে প্রমাণিত হয় যে, অন্য কোন ব্যক্তিকেও কাপড় পরানো হবে। তা না হলে প্রথম হওয়া বুঝাবে না। প্রশ্নে উল্লেখিত হাদীছটিও সে কথা প্রমাণ করে। আর সে জন্য শিশু সন্তান পিতা-মাতার কাপড় ধরে টানার সুযোগ পাবে।
প্রশ্ন (১৪/২১৪) : জনৈক ব্যক্তির হজ্জ করার প্রবল আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও সে হঠাৎ মারা গেছে। কিন্তু কাউকে অছিয়ত করে যায়নি। এক্ষেত্রে তার পক্ষ থেকে বদলী হজ্জ করা যাবে কি? সে তার ছওয়াব পাবে কি?
-আশিকুর রহমান
ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা, ঢাকা-১২০৯।
উত্তর : উক্ত ব্যক্তির পক্ষ থেকে বদলী হজ্জ করা যাবে এবং মাইয়েত তার নেকীও পাবেন (মুসলিম হা/২৭৫৩; মিশকাত হা/১৯৫৫)। তবে বদলী হজ্জ সম্পাদনকারীকে আগে নিজের হজ্জ করতে হবে (আবুদাঊদ, মিশকাত হা/২৫২৯)।
প্রশ্ন (১৫/২১৫) : বাজারে শেয়ার বেচাকেনা হয়। এর লাভ লটারীর মাধ্যমে শেয়ার হোল্ডারদের মাঝে বণ্টন করা হয় অথবা একাউন্টে জমা হয়। এভাবে লটারীর মাধ্যমে বেচাকেনা করা যাবে কি?
-আমীনুল ইসলাম
পুরানা পল্টন, ঢাকা।
উত্তর : বিভিন্ন কারণে শেয়ার বেচাকেনা জায়েয নয়। যেমন- (১) ক্রেতার অনেক সময় সম্যক জ্ঞান থাকে না কী বস্ত্তর শেয়ার তিনি ক্রয় করেছেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হারাম বস্ত্তর ক্রয়-বিক্রয় হারাম করেছেন (আবুদাঊদ হা/৩৪৮৮)। (২) যে বস্ত্তর শেয়ার কেনা-বেচা হয়, তা দেখা ও জানা-বুঝার সুযোগ থাকে না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এমন ক্রয়-বিক্রয়কে ধোঁকা বলেছেন (মুসলিম হা/৩৮৮১; বুলূগুল মারাম হা/৭৮৪)। (৩) শেয়ার ব্যবসার পণ্য আয়ত্বে নিয়ে আসার সুযোগ থাকে না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বস্ত্ত ক্রয়ের পর তা নিজ মালিকানায় নিয়ে আসার পূর্বে বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন (মুসলিম হা/৩৯১৬ ও ৩৯২৫; বুলূগুল মারাম হা/৭৮৫)। (৪) শেয়ার ব্যবসা একটি জুয়া মাত্র। যেখানে ক্রেতা-বিক্রেতা কেউ মাল দেখে না। অথচ ঘণ্টায় ঘণ্টায় দর উঠা-নামা হয়। (৫) শেয়ার ব্যবসায় ফটকাবাজারীর প্রচুর সুযোগ রয়েছে। অনেক সময় কোম্পানী তার প্রকৃত তথ্য গোপন রাখে। কখনো লোকেরা কোম্পানীতে শেয়ার কিনে অধিক লাভ করে। কখনো কারখানা তৈরি না করেই তার শেয়ার বাজারে ছাড়া হয় এবং নতুন শেয়ারে অধিক লাভ মনে করে সেটিকে লোকেরা অধিক মূল্যে খরিদ করে। কোনরূপ ব্যবসা বা মালামাল ছাড়াই তারা এ লাভ করে থাকে। এছাড়াও নিত্যনতুন ছলচাতুরী শেয়ারবাজারে প্রতিনিয়ত যুক্ত হচ্ছে। (৬) এতে সূদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। বর্তমানে অধিকাংশ শেয়ার ব্যবসা ব্যাংক থেকে সূদের ভিত্তিতে ঋণ নিয়ে করা হচ্ছে। অতএব শেয়ার ব্যবসা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক (দ্রঃ আত-তাহরীক ডিসেম্বর ২০১০, প্রশ্নোত্তর : ২৫/১০৫)।
প্রশ্ন (১৬/৯৬) : ওমর (রাঃ) মেয়েদের মোহরানা নির্ধারণ করে দিলে জনৈক মহিলা তার বিরোধিতা করেছিলেন মর্মে যে ঘটনা প্রচলিত আছে তার প্রমাণ জানিয়ে বাধিত করবেন।
-যাকির
ইসলামপুর, জামালপুর।
উত্তর : বায়হাক্বী (৭/২৩৩ পৃঃ) বর্ণিত উক্ত হাদীছটি মুনক্বাতি‘ অর্থাৎ যঈফ। তবে একই হাদীছ যা আবুদাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনু মাজাহতে বর্ণিত হয়েছে, সেটি ‘হাসান’। তবে সেখানে মহিলার আপত্তির কথা বর্ণিত হয়নি। উল্লেখ্য যে, মোহরানা বেশী করায় কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। বরং উক্ত আয়াত দ্বারা ‘মুবাহ’ প্রমাণিত হয়। তবে সেটা হবে বরের আর্থিক অবস্থার বিবেচনায়। মোহরানায় কোন বাড়াবাড়ি করা যাবে না। বরং সর্বদা মধ্যপন্থা অবলম্বন করতে হবে (দ্রঃ তাফসীর কুরতুবী; নিসা ২০ ও ২১ আয়াত; বায়হাক্বী ‘মোহরানা’ অধ্যায় ৭/২৩৩-৩৫)।
প্রশ্ন (১৭/৯৭) : আমি বাসের হেলপার। ছালাত আদায় করার সুযোগ পাই না। আমার করণীয় কি? জান্নাত পাওয়ার আশায় চাকুরী ছেড়ে দেব, না পেটের দায়ে জান্নাত হারাব?
-আব্দুল্লাহ আল-মামূন
লাখাই, হবিগঞ্জ।
উত্তর : বাসের হেলপার হলেও ছালাত ত্যাগ করা যাবে না। ছালাত আদায়ের সময় বের করে নিতে হবে। উক্ত অবস্থায় যোহর ও আছর একত্রে দুই দুই রাক‘আত করে পৃথক এক্বামতে জমা ও ক্বছর করবেন। অনুরূপভাবে মাগরিব তিন রাক‘আত ও এশা দুই রাক‘আত পৃথক এক্বামতে জমা ও ক্বছর করবেন। এটি দুই নিয়মে পড়া যায়। শেষের ওয়াক্তের ছালাত আগের ওয়াক্তের সাথে এগিয়ে অথবা আগের ওয়াক্তের ছালাত শেষের ওয়াক্তের সাথে পিছিয়ে একত্রে পড়বেন (বুখারী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/১৩৩৯, ৪৪; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২১৫)। বিশেষ কারণে বাড়ীতে থাকা অবস্থায়ও যোহর-আছর চার-চার অথবা মাগরিব-এশা তিন-চার রাক‘আত একত্রে জমা করে ছালাত আদায় করতে পারেন এবং তারপর সফরে বের হতে পারেন (বুখারী হা/১১৭৪)। এই সময় বা সফরকালে কেবল বিতর ও ফজরের সুন্নাত ব্যতীত আর কোন সুন্নাত পড়ার প্রয়োজন নেই (দ্রঃ ছালাতুর রাসূল পৃঃ ১৮৮-৮৯)। অনেক সময় ক্বিবলা বুঝা যায় না। তখন যেকোন দিকে মুখ করে ছালাত আদায় করা যাবে (বাক্বারাহ ১১৫; তিরমিযী হা/৩৪৫)। এছাড়াও অনেক সময় পানি ও মাটি কিছুই পাওয়া যায় না, তখন বিনা ওযূ ও তায়াম্মুমেই ছালাত আদায় করা যাবে (বুখারী হা/৩৩৬)।
অতএব ছালাতের বিকল্প নেই। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘মুমিন ও কাফির-মুশরিকের মধ্যে পার্থক্য হ’ল ছালাত’ (মুসলিম হা/১৩৪)। যে ব্যক্তি ছালাত পরিত্যাগ করল সে কুফরী করল (আহমাদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৫৭৪ ‘ছালাত’ অধ্যায়)।
পরিশেষে বলব, যদি ছালাত আদায়ের কোনরূপ সুযোগ না থাকে, তাহ’লে উক্ত চাকরী ছাড়তে হবে।
প্রশ্ন (১৮/৯৮) : অনেক মুছল্লী ছালাত শেষে দো‘আ পাঠ করে স্বীয় হাতের আঙ্গুল দ্বারা তিনবার চোখ মাসাহ করেন। এরূপ করার কোন দলীল আছে কি?
-মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম
ঘোড়াঘাট, দিনাজপুর।
উত্তর : উক্ত আমলের প্রমাণে কোন দলীল পাওয়া যায় না। অনেক সূরা ক্বাফ-এর ২২নং আয়াত ‘লাক্বাদ কুনতা... পাঠ করে স্বীয় চোখ মাসাহ করেন। উক্ত মর্মেও কোন হাদীছ পাওয়া যায় না।
প্রশ্ন (১৯/৯৯) : হিজড়া ব্যক্তি মারা গেলে তার জানাযা পড়তে হবে কি? কাফন দেওয়ার সময় তাকে পুরুষ না মহিলার কাফন দিতে হবে?
-ইবরাহীম
রাণী শংকৈল, ঠাকুরগাঁ।
উত্তর : হিজড়া পুরুষের অন্তর্ভুক্ত (বুখারী হা/৫৮৮৬)। মুসলিম হ’লে পুরুষের নিয়মেই তার জানাযার ছালাত পড়তে হবে। ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, নারী ও পুরুষের কাফন তিন কাপড় দিয়ে করতে হবে। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে তিনটি সাদা সূতী কাপড়ে কাফন দেওয়া হয়েছিল। তারমধ্যে ক্বামীছ ও পাগড়ী ছিল না (বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত হা/১৬৩৫)। উল্লেখ্য যে, নারীদের পাঁচ কাপড়ে কাফন দেওয়ার হাদীছটি ‘যঈফ’ (যঈফ আবুদাঊদ হা/৩১৫৭ ‘মহিলাদের কাফন দেওয়া’ অনুচ্ছেদ)।
প্রশ্ন (২০/১০০) : সূরা রহমানে আল্লাহ বলেন, ‘দুই পূর্ব এবং দুই পশ্চিমের রব’। আমরা জানি, পূর্ব এবং পশ্চিম একটি করে। উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা জানিয়ে বাধিত করবেন।
মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম
আজিজুল হক কলেজ, বগুড়া।
উত্তরঃ পবিত্র কুরআনে উক্ত শব্দদ্বয় বহুবচনেও এসেছে। যেমন ‘রাববুল মাশারিক্ব’ অনেক পূর্বের রব (ছাফফাত ৫; মা‘আরিজ ৪০)। তাতে বুঝানো হয়েছে যে, সূর্য বছরের ৩৬০ দিনে নির্ধারিত একটি মাত্র স্থান হ’তে উদিত হয় না। এর দ্বারা সূর্যের গতিশীলতার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে, যা সৌর বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সূর্য প্রতিদিন পরিবর্তিত স্থান হ’তে উদিত হয়। সূরা রহমানে যে দ্বিবচন ব্যবহার করা হয়েছে তার দ্বারা সূর্য গ্রীষ্মকালে উত্তর-পূর্ব এবং শীতকালে দক্ষিণ-পূর্ব কোণে উদয়াস্তের কথা বুঝানো হয়েছে (তাফসীরে ফাৎহুল ক্বাদীর, সূরা ছাফফাত ৫)।
প্রশ্নঃ (২১/১০১) : নবী করীম (ছাঃ)-এর জন্মদিনের স্মরণে কোন প্রাণী যবেহ করলে তার গোশত খাওয়া যাবে কি?
-লতীফুর রহমান
তেরখাদা, খুলনা।
উত্তর : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর জন্মদিনের স্মরণে কোন প্রাণী যবেহ করা জায়েয নয়। আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে কোন কিছু উৎসর্গ করা শিরক। সুতরাং উক্ত প্রাণীর গোশত খাওয়া যাবে না (মায়েদাহ ৩)। উল্লেখ্য যে, রাসূল (ছাঃ)-এর জন্ম দিন উপলক্ষে ঈদে মীলাদুন্নবী কিংবা সীরাতুন্নবী ইত্যাদি অনুষ্ঠান করা বিদ‘আত বা গর্হিত অন্যায় (মুসলিম হা/২০৪২; নাসাঈ হা/১৫৭৮; মিশকাত হা/১৪১)।
প্রশ্ন (২২/২২২) : চোর তওবা করার পূর্বে মারা গেলে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে কি?
-মুহাম্মাদ মশিউর রহমান
রাজশাহী কলেজ, রাজশাহী।
উত্তর : চুরি করা কাবীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। কাজেই কেউ চুরি করার পর তওবা না করে মারা গেলে সে চুরির অপরাধে জাহান্নামে শাস্তি ভোগ করবে। তবে সে যদি আন্তরিক বিশ্বাস নিয়ে কালেমা পড়ে থাকে, তাহ’লে কালেমায়ে শাহাদাতের বরকতে এবং শেষনবী মুহম্মাদ (ছাঃ)-এর শাফা‘আতে এক সময় জান্নাতে ফিরে আসবে (বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত হা/৫৫৭৩)।
প্রশ্ন (২৩/২২৩) : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পেশাব, পায়খানা, রক্ত না-কি পবিত্র ছিল। উক্ত দাবী কি সঠিক?
-মুহাম্মাদ কবীর
ফতুল্লা, নারায়নগঞ্জ।
উত্তর : উক্ত মর্মে যে সমস্ত বর্ণনা পাওয়া যায় সেগুলো সবই জাল বা বানোয়াট।
প্রশ্ন (২৪/২২৪) : ছহীহ হাদীছ জানার পর যারা বিদ‘আতী আমল করে থাকে তাদের পরিণতি কি হবে?
-সুমাইয়া, নরসিংদী।
উত্তর : বিদ‘আতীদের পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ হবে। যেমন- আল্লাহ বলেন, ‘আপনি বলে দিন, আমি কি তোমাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত আমলকারীদের সম্পর্কে জানিয়ে দিব? (দুনিয়াবী জীবনে) যাদের সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে গেছে। অথচ তারা ভাবে যে, তারা সুন্দর আমলই করে যাচ্ছে’ (কাহফ ১০৩-৪)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টি করা হ’তে বিরত থাক। নিশ্চয় প্রত্যেক নতুন সৃষ্টিই বিদ‘আত ও প্রত্যেক বিদ‘আতই গোমরাহী (আহমাদ, আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/১৬৫)। নাসাঈ-র বর্ণনায় এসেছে, ‘প্রত্যেক গোমরাহীর পরিণাম জাহান্নাম’ (নাসাঈ হা/১৫৭৮)। বিদ‘আতীর আমল কবুল হয় না (বুখারী হা/৩১৮০)। সে হাউয কাওছারের পানি পান করা হ’তে বঞ্চিত হবে (মুসলিম হা/৪২৪৩)। বিদ‘আতীর উপর আল্লাহ এবং ফেরেশতা ও সকল মানুষের লা‘নত বর্ষিত হয় (বুখারী হা/৩১৮০)।
প্রশ্ন (২৫/২২৫) : দোকান বা নব নির্মিত বাড়ীতে বসবাসের জন্য সকলে মিলে হাত তুলে দো‘আ করা যাবে কি?
-মুহাম্মাদ মশিউর রহমান
দাউদপুর, দিনাজপুর।
উত্তর : দোকান বা নব নির্মিত বাড়ীতে ওঠা ও তার জন্য কুরআন পাঠ, মীলাদ পড়ানো, অনুষ্ঠান করা, মুনাজাত করা সবই বিদ‘আতী প্রথা। রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবীদের যুগে এ ধরনের কোন প্রথার অস্তিত্ব ছিল না। এগুলো থেকে বিরত থাকতে হবে (মুসলিম হা/৪৫৯০)। বাড়ীওয়ালা নিজে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে উঠে যাবেন ও আল্লাহ্র রহমত ও বরকত কামনা করবেন।
প্রশ্ন (২৬/২২৬) : বিবাহের ২ বছর পর স্ত্রী প্রস্তাব দেয় যে, স্বামী ঘরজামাই থাকলে সে স্বামীর সাথে ঘর-সংসার করবে, নইলে করবে না। কিন্তু স্বামী ঘরজামাই থাকবে না। উক্ত দ্বন্দ্বের কারণে তারা ৮ বছর যাবৎ পৃথক হয়ে আছে। তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ বা তালাক হয়েছে কি? অথবা বিবাহ বিচ্ছেদ করতে হলে স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীকে পুনরায় তালাক দিতে হবে কি?
-এফ রহমান
গাযীপুর।
উত্তর : স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদের জন্য শরী‘আত কর্তৃক দু’টি পন্থা রয়েছে। একটি হচ্ছে স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে শরী‘আতের পদ্ধতি অনুযায়ী তালাক প্রদান করা। অন্যটি হচ্ছে- স্বামীর দেওয়া মোহরানা সরকারি কর্তৃপক্ষের নিকটে ফেরত দিয়ে স্ত্রীর ‘খোলা’ করে নেওয়া (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩২৭৪-৭৫)। যেহেতু উক্ত দু’টির কোনটিই সংঘটিত হয়নি, তাই তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়নি, তালাকও হয়নি। সুতরাং তারা যদি উভয়ে মীমাংসা করে একত্রিত হতে চায়, তাহলে একত্রিত হতে কোন বাধা নেই। আর বিচ্ছেদ চাইলে শারঈ পদ্ধতির মাধ্যমে বিচ্ছেদ ঘটাতে পারবে।
প্রশ্ন (২৭/২২৭) : জনৈক ইমাম তিন তোহরে তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়েছে। তারপরেও সে উক্ত স্ত্রী নিয়ে সংসার করছে। এছাড়া সে তার পিতার সাথে দুর্ব্যবহার করে। একদা নালিশে মীমাংসার কথা বলা হলে সে জবাব দেয়, মীমাংসা কিসের উক্ত পিতাকে হত্যা করা জায়েয আছে। প্রায় ২/৩ বছর পূর্বে তার সৎ মায়ের সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করে ও তার সামনে নগ্নতা প্রদর্শন করে। উক্ত ইমামের পিছনে ছালাত আদায় করা যাবে কি? অনেকে তার পিছনে ছালাত আদায় করা ছেড়ে দিয়েছে। উক্ত বিষয়ে সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।
-আফসার
দুয়ারপাল, পোরশা, সাপাহার।
উত্তর : উক্ত ব্যক্তি স্ত্রীকে তিন তোহরে তিন তালাক দেওয়ার পরও যদি স্ত্রীকে হালাল মনে করে ব্যবহার করে, তবে সে ইসলাম থেকে খারিজ বলে গণ্য হবে (ফাতাওয়া লাজনাহ দায়েমাহ ৭ম খন্ড, পৃঃ ৩৭৮; ফাতাওয়া উছায়মীন, ১৫তম খন্ড, পৃঃ ১৩৪)। উক্ত অন্যায় কর্মকান্ডের জন্য তাকে ইমামতি থেকে বরখাস্ত করতে হবে এবং তার স্থলে একজন ন্যায়পরায়ণ ইমাম নিযুক্ত করতে হবে। আল্লাহ বলেন, তোমরা অন্যায় কর্মে কাউকে সহযোগিতা করো না’ (মায়েদাহ ২)।
প্রশ্ন (২৮/২২৮) : বাড়ীতে তারাবীহ্র ছালাত আদায় করলে ক্বিরাআত সরবে হবে না নীরবে?
-মাহফুযা
মোহনপুর, রাজশাহী।
উত্তর : সরবে ক্বিরাআত পড়বে। তবে উচ্চৈঃস্বরে নয় (আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/১২০৪, সনদ ছহীহ)।
প্রশ্ন (২৯/২২৯) : এক যুবক জনৈক ব্যক্তির মেয়েকে বিবাহ করার প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু তার ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে যে, সে ছালাত আদায় করে না। কিন্তু বলা হচ্ছে, ঠিক হয়ে যাবে। উক্ত যুবকের সাথে মেয়ে বিয়ে দেয়া যাবে কি?
-আবুল হুসাইন
কেন্দুয়াপাড়া, কাঞ্চন, রূপগঞ্জ।
উত্তর : যাবে না। কারণ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, মুমিন ও কাফেরের মধ্যে পার্থক্য হল ছালাত (ছহীহ মুসলিম হা/১৩৪, ঈমান অধ্যায়; ফাতাওয়া উছায়মীন, ১২ খন্ড, পৃঃ ১০০)। তবে সে যদি তওবা করে এবং নিয়মিত ছালাত আদায় করে তাহলে তার সাথে বিয়ে দেওয়া যাবে।
প্রশ্ন (৩০/২৩০) : কোন হিন্দু তার নিজস্ব লাইব্রেরীর দোকানে কুরআন মজীদ কেনা-বেচা করতে পারবে কি?
-আইয়ূব
ভবানীগঞ্জ, বাগমারা, রাজশাহী।
উত্তর : পারবে না। কারণ হিন্দুরা মুশরিক। তারা অপবিত্র (তওবা ২৮; ওয়াক্বি‘আহ ৭৯)। এটা পবিত্র কুরআনের জন্য অবমাননাকর।
প্রশ্ন (৩১/২৩১) : হাদীছে রয়েছে, ছিয়াম পালনকারীর জন্য দু’টি আনন্দের মুহূর্ত রয়েছে- (১) ইফতারের সময় (২) আল্লাহ্র সাথে জান্নাতে সাক্ষাতের সময়। কিন্তু জনৈক আলেম বলেছেন, দ্বিতীয়টি হবে সাহারীর সময় যখন আল্লাহ দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন। উক্ত ব্যাখ্যা কি সঠিক?
-মুহাম্মাদ দেলোয়ার
খিদিরপুর, নরসিংদী।
উত্তর : উক্ত ব্যাখ্যা সঠিক নয়। বরং প্রশ্নে বর্ণিত দু’টি সময়ই আনন্দের সময় (ফাৎহুল বারী ৪/১১৮ পৃঃ)।
প্রশ্ন (৩২/২৩২) : চাশতের ছালাত আদায় করার সঠিক সময় কখন? বেলা উঠার কতক্ষণ পর হতে এ ছালাত পড়তে হবে? কোনদিন ছুটে গেলে ক্বাযা আদায় করতে হবে কি?
-মুঈনুল ইসলাম
উত্তর বাড্ডা, ঢাকা।
উত্তর : সূর্য স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে উক্ত ছালাতের সময় শুরু হয়। প্রথম প্রহরের শুরুতে পড়লে তাকে ‘ছালাতুল ইশরাক্ব’ বলে এবং কিছু পরে দ্বিপ্রহরের পূর্বে পড়লে তাকে ছালাতুয যোহা বা চাশতের ছালাত বলা হয় (ছালাতুর রাসূল (ছাঃ), পৃঃ ২৫৪)। এই ছালাতকেই ‘ছালাতুল আউয়াবীন’ বলা হয়’ (মুসলিম, মিশকাত হা/১৩১২)। এ ছালাত সর্বদা পড়া বা আবশ্যিক গণ্য করা উচিত নয়। কারণ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কখনো পড়তেন, কখনো ছাড়তেন (তিরমিযী হা/৪৭৭, সনদ হাসান)। অতএব কোনদিন ছুটে গেলে ক্বাযা করার প্রয়োজন নেই।
প্রশ্ন (৩৩/২৩৩) : একদা মু‘আবিয়া (রাঃ) মদীনার মসজিদে এশার ছালাতের ইমামতি করেন। তিনি ‘সূরা ফাতিহার শুরুতে’ বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রাহীম’ নীরবে পাঠ করেন। ফলে আনছার ও মুহাজির ছাহাবীগণ মু‘আবিয়া (রাঃ)-কে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি কি ছালাত চুরি করলেন না ভুলে গেলেন? পরবর্তীতে তিনি আর কখনো নীরবে পড়েননি। উক্ত ঘটনা কি সঠিক?
-সফিউদ্দীন আহমাদ
নরসিংদী।
উত্তর : উক্ত মর্মে দারাকুৎনীতে দু’টি ‘আছার’ বর্ণিত হয়েছে (দারাকুৎনী হা/১১৯৯ ও ১২০০)যা যঈফ। ইবনু মাঈন, নাসাঈ, আলী ইবনুল মাদীনী প্রমুখ মুহাদ্দিছ যঈফ বলেছেন (নাছবুর রাইয়াহ ১/৩৫৩ পৃঃ)। উল্লেখ্য যে, ‘বিসমিল্লাহ’ সরবে বলার পক্ষে যতগুলো বর্ণনা রয়েছে সবই দুর্বল। বরং আস্তে বলার পক্ষে বর্ণিত হাদীছগুলি ছহীহ (মুসলিম, মিশকাত হা/৮২৩; আলোচনা দ্রঃ ছালাতুর রাসূল (ছাঃ), পৃঃ ৮৬-৮৭)।
প্রশ্ন (৩৪/২৩৪) : ভুলক্রমে ফরয ছালাত পাঁচ রাক‘আত পড়া হয়েছে। মুছল্লীরা লোকমা দেয়নি সবাই সুন্নাত পড়তে শুরু করেছে। কিন্তু যে এক রাক‘আত পায়নি সে বলল, আমার ছালাত পূর্ণ হয়েছে, কিন্তু আপনাদের এক রাক‘আত বেশী হয়েছে। এখন করণীয় কী?
-সৈয়দ ফয়েয
ধামতী, কুমিলা।
উত্তর : উক্ত অবস্থায় ইমাম যদি বসে থাকেন, তবে যারা সুন্নাত শুরু করেনি তাদের নিয়ে তাকবীর দিয়ে দু’টি ‘সিজদায়ে সহো’ করে সালাম ফিরাবেন (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১০১৬)। যারা সুন্নাত শুরু করেছেন তাদের সহো সিজদা দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
প্রশ্ন (৩৫/২৩৫) : একই সঙ্গে একাধিক মৃত ব্যক্তির জানাযা পড়া যাবে কি?
-আবুল কালাম আযাদ
সারদা কুঠিপাড়া, রাজশাহী।
উত্তর : যাবে। মাইয়েত পুরুষ ও নারী মিশ্রিত হ’লে পুরুষের লাশ ইমামের কাছাকাছি সম্মুখে রাখবে। অতঃপর মহিলার লাশ রাখবে। যদি শিশু ও মহিলা হয় তাহ’লে শিশুর লাশ প্রথমে ও পরে মহিলার লাশ রাখবে (বুখারী হা/১৩৪৭, ছালাতুর রাসূল (ছাঃ), পৃঃ ২১৪; ফাতাওয়া উছায়মীন ১৭তম খন্ড, পৃঃ ১০২)।
প্রশ্ন (৩৬/২৩৬) : রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা জিবরীল (আঃ)-এর মাধ্যমে কিছু শহরকে অধিবাসীসহ উল্টিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দান করেন। কিন্তু সেখানে একজন পরহেযগার ব্যক্তি থাকায় জিবরীল (আঃ) আপত্তি করেন। তখন আল্লাহ তা‘আলা বললেন, তার ও তাদের সকলের উপরই শহরটিকে উল্টিয়ে দাও। কারণ তার সম্মুখে পাপাচার হতে দেখে মুহূর্তের জন্যও তার চেহারা মলিন হয়নি (শু‘আবুল ঈমান হা/৭৫৯৫; মিশকাত হা/৫১৫২)। উক্ত হাদীছকে জনৈক আলেম যঈফ বললেন। তার দাবী কি সঠিক?
-নাজমুল ইসলাম
ধামরাই, ঢাকা।
উত্তর : উক্ত আলেমের দাবী সঠিক। এর সনদে আম্মার ইবনু সাইফ ও উবাইদ ইবনু ইসহাক্ব আল-আত্ত্বার নামে দু’জন যঈফ রাবী আছেন। ইমাম দারাকুৎনী, ইমাম যাহাবী প্রমুখ মুহাদ্দিছ তাকে যঈফ বলেছেন (সিলসিলা যঈফাহ হা/১৯০৪; মিশকাত হা/৫১৫২)।
প্রশ্ন (৩৭/২৩৭) : যে ঔষধে এ্যালকোহল মিশানো থাকে সে ঔষধ খাওয়া যাবে কি?
-মুহাম্মাদ
ইতিহাস বিভাগ, রাজশাহী কলেজ।
উত্তর : সরাসরি এ্যালকোহল পান নিষিদ্ধ (মায়েদাহ ৯০)। কিন্তু তা যদি পরিশুদ্ধ করে ঔষধ বানানো হয় ও মাদকতা না আসে এবং ছালাত ও যিকর হতে বিরত না রাখে, তবে তা জায়েয হবে (ফাতাওয়া উছায়মীন ১১তম খন্ড, পৃঃ ২৫৬-২৫৯)। যেমন- সাপ খাওয়া হারাম কিন্তু সেই সাপের বিষ দ্বারা ঔষধ তৈরি করা জায়েয।
প্রশ্ন (৩৮/২৩৮) : কোন সভা-সমিতি বা আলোচনা বৈঠকে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর নাম উচ্চারণ করা হলে শ্রোতাদেরকে কেন ‘ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম’ বলতে হয়?
-রফীক আহমাদ
বিরামপুর, দিনাজপুর।
উত্তর : হাদীছের নির্দেশ অনুযায়ী এটা বলতে হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, কৃপণ সেই ব্যক্তি যার নিকট আমার নাম উল্লেখ করা হয়, অথচ সে আমার উপর দরূদ পাঠ করে না (তিরমিযী, মিশকাত হা/৯৩৩)। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পাঠ করে, আল্লাহ তার উপর দশবার রহমত নাযিল করেন, তার দশটি পাপ ক্ষমা করা হয় এবং তার মর্যাদা দশগুণ বৃদ্ধি করা হয়’ (নাসাঈ, মিশকাত হা/৯২২)।
প্রশ্ন (৩৯/২৩৯) : মসজিদে ইমাম না থাকায় এক ব্যক্তি এশার ছালাতে ইমামতি করেন। তিনি একটি ৭/৮ বছরের ছেলেকে তার ডান পার্শ্বে নিয়ে ছালাত আদায় করেন। এতে মসজিদে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। এমনকি কেউ কেউ ছালাত পুনরায় পড়ে। উক্ত ছালাত সঠিক হয়েছে কি?
-মাস‘ঊদ
মেহেরপুর সদর।
উত্তর : ইমামের ছালাত সঠিক হয়েছে। আর যারা বিতর্কে লিপ্ত হয়েছে এবং পুনরায় ছালাত আদায় করেছে তারা ভুল করেছে। কারণ শিশু সন্তানকে পার্শ্বে নিয়ে কিংবা কাঁধে ও কোলে নিয়ে ছালাত আদায় করা যায়। স্বয়ং রাসূল (ছাঃ) এমনটি করেছেন। আবু ক্বাতাদা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে লোকেদের ইমামতি করতে দেখেছি, অথচ তখন আবুল ‘আছের কন্যা উমামা (অর্থাৎ নাতনী) তাঁর কাঁধের উপর ছিল (বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত হা/৯৮৪)।
প্রশ্ন (৪০/২৪০) : অনেক আলেমকে দেখা যায়, সাদা দাড়িতে কলপ দিয়ে কালো করে এবং দাড়ি কেটে ছোট করে। শরী‘আতে এর অনুমোদন আছে কি?
-আব্দুল আলীম
নবীগঞ্জ, হবিগঞ্জ।
উত্তর : শরী‘আতে এর কোন অনুমোদন নেই। রাসূল (ছাঃ) বলেন, শেষ যামানায় একশ্রেণীর লোক চুল-দাড়িতে কালো রং দ্বারা খেযাব দিবে। দেখতে কবুতরের বুকের মত সুন্দর লাগবে। তারা জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না (আবুদাউদ হা/৪২১২)। বরং মেহেদী লাগাবে (তিরমিযী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪৪৫১)। দাড়ি কাটা, ছাঁটা, চাছা কোনটিই শরী‘আত সম্মত নয় (আবূদাঊদ, নাসাঈ, তাবারাণী মিশকাত হা/৪৪৫২)। বরং গোঁফ ছাটবে ও দাড়ি ছেড়ে দিবে (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৪৪২১)।
কোন মন্তব্য নেই