সূরা আল বাক্বারাহ এর কিছু আয়াত যা আপনাকে সত্যের পথ দেখাতে পারে
২ নং সূরা- আল বাক্বারাহ
(মদীনায় অবতীর্ণ ক্রম- ৮৭), আয়াত সংখাঃ ২৮৬
[বাক্বারাহ অর্থ গরু, ৬৭ - ৭১ নং আয়াতে ইহুদিদের চরম গো-প্রীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও গো-কুরবানীর আদেশ সম্পর্কিক আলোচনা করা হয়েছে]
///////////////////////////////////////////
১) আলিফ লা-ম মী-ম।
২) এই সেই কিতাব যাতে কোনই সন্দেহ নেই, আল্লাহভীরুদের জন্য পথ প্রদর্শক,
৩) যারা গায়েবে (অদৃশ্যলোকে/ অধ্যাত্ম জগতে) বিশ্বাস করে এবং সালাত কায়েম (নামাজ প্রতিষ্ঠা) করে আর আমি তাদেরকে যে রুযী দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে,
৪) এবং যারা বিশ্বাস করে- যা কিছু তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং যা কিছু তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে, আর পরকালকে যারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে,
৫) তারাই তাদের পালনকর্তার দেখানো সঠিক পথের উপর রয়েছে এবং নিঃসন্দেহে তারাই তো সফলকাম।
৬) নিশ্চিতভাবে যারা অস্বীকারকারী/ অবিশ্বাসী হয়ে গেছে, তাদেরকে তুমি সতর্ক করো বা না করো, তাদের জন্য সবই সমান- তারা বিশ্বাস করবে না।
৭) আল্লাহ মোহর অর্থাৎ সিল মেরে দেন তাদের অন্তঃকরণের উপরে, তাদের শ্রবণশক্তির উপরে এবং তাদের দৃষ্টিশক্তির উপরে- (যেন) এক গোপন আবরণ বা অন্তরাল; আর তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি।
৮) আর মানুষের মধ্যে এমনও রয়েছে যারা বলে,"আমরা আল্লাহ ও শেষ দিবসে (পরকালে) বিশ্বাস করি" অথচ তারা কিন্তু (আসলে) বিশ্বাসী নয়।
৯) তারা আল্লাহ এবং বিশ্বাসীদেরকে ধোঁকা দেয়ার পাঁয়তারা করে, কিন্তু তারা তো নিজেদেরকে ছাড়া কাউকে ধোঁকা দেয় না এবং তারা তা অনুভব করেনা।
১০) তাদের অন্তরে আছে (মোনাফেকির) ব্যাধি, সুতরাং এই ব্যাধির মাঝেই আল্লাহ তাদের বাড়তে দেন। বস্তুতঃ তাদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে ভয়াবহ শাস্তি, কারণ তারা মিথ্যাচার করে।
১১) আর যখন তাদেরকে বলা হয়, "পৃথিবীতে ফাসাদের (অবক্ষয়/ দাঙ্গা-হাঙ্গামা) প্রসার ঘটিও না", তারা বলে,"আমরা তো সংস্কারক/ সংশোধনকারী মাত্র"।
১২) হঁশিয়ার! নিশ্চয় তারা নিজেরাই ফাসাদের (সন্ত্রাস/ লুন্ঠন/ অবক্ষয়/ দাঙ্গা-হাঙ্গামা) বিস্তার ঘটায়, কিন্তু তারা তা উপলব্ধি করে না।
১৩) আর যখন তাদেরকে এটা বলা হয়, "বিশ্বাস কর যেমনটি বিশ্বাস করেছিল মানুষেরা", তারা বলে, "আমরাও কি বিশ্বাস করব যেমনটি বিশ্বাস করেছিল নির্বোধরা?"সাবধান! প্রকৃতপক্ষে তারা নিজেরাই তো নির্বোধ এবং তারা কিন্তু তা বোঝে না।
১৪) আর যখন তারা বিশ্বাসীদের সাথে মিলিত হয়, তারা বলে, "আমরা বিশ্বাস করি", আবার যখন তাদের শয়তানদের সাথে একান্তে মিলিত হয়, তারা বলে, "আমরা তোমাদের সাথেই আছি, আমরা তো উপহাসকারী মাত্র।"
১৫) আল্লাহতাআ'লাই তাদের সাথে উপহাস করেন এবং তাদের সীমা লঙ্ঘনের মাঝেই তাদের অবস্থানকে দীর্ঘায়িত করেন, (ফলে) তারা বিবেচনাশূন্য হয়ে উদ্দেশ্যহীনভাবে যত্রতত্র ঘুরে বেড়ায়।
১৬) ওরাই তো তারা, যারা ধর্ম-পথ চালনার (হেদায়েতের) জন্য কুপথ/ ভ্রষ্টপথ/ বিপথগামিতা ক্রয় করেছিল, সুতরাং তাদের এ ব্যবসা লাভজনক ছিলনা এবং তারা সুপথ প্রাপ্তদের কেউ ছিলনা।
১৭) তাদের উপমা সে ব্যক্তির মত, যে আগুন জ্বালালো এবং তার চারদিকের সবকিছুকে যখন তা আলোকোজ্জ্বল করে তুললো, (এ অবস্থায়) আল্লাহ তাদের আলোটা উঠিয়ে নিলেন এবং তাদেরকে অন্ধকারের মাঝে ছেড়ে দিলেন, (ফলে) তারা কিছুই দেখতে পায় না।
১৮) এরা (বধির) শোনে না, (বোবা) বলে না, (অন্ধ) দেখেও না- সুতরাং না, তারা ফিরেও আসেনা।
১৯) অথবা (তাদের উপমা) আকাশ হতে আসা ঝড়বৃষ্টির মত, যার মাঝে থাকে আঁধার, বজ্রধ্বনি ও বিজলি-চমক, বজ্রাঘাতে মৃত্যুর ভয়ে তারা আঙ্গুলগুলো রাখে তাদের কানের মাঝে; আর আল্লাহ তো সকল অবিশ্বাসীদের চতুর্দিক থেকে ঘিরে রাখেন।
২০) বিদ্যুতের ঝলকানি তাদের দৃষ্টিশক্তি প্রায় ছিনিয়ে নিচ্ছিল, যখনই তা তাদের জন্য ঝলক দেয়, তারা এর মাঝে পথ চলে, আর যখনই তা অন্ধকারাচ্ছন্ন করে দেয়, তারা দাঁড়িয়ে পড়ে, আর যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন, নিঃসন্দেহে তিনি তাদের শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি ছিনিয়ে নিতে পারতেন, বস্তুত আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।
২১) হে মানবজাতি! তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ইবাদত কর, যিনি তোমাদেরকে এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যেন এর মাধ্যমে তোমরা ধর্মণিষ্ঠা/ ন্যায়পরায়ণতা অর্জন করতে পার।
২২) সেই মহান সত্তা তোমাদের জন্য ভূপৃষ্ঠকে জাজিম/ তোশক এবং আকাশকে ছাদ স্বরূপ স্থাপন/ পরিগঠন করলেন, আর আকাশ থেকে পানি প্রেরণ করলেন, অতঃপর এর মাধ্যমে ফল-ফলাদি উৎপাদন করে তোমাদের জন্য সরবরাহ করলেন। অতএব, আল্লাহর সাথে তোমরা প্রতিদ্বন্দ্বী/ সমকক্ষ স্থাপন করো না, আর যখন তা তোমরা জান।
২৩) এবং যদি তোমাদের কোন সন্দেহ থাকে যা আমরা অবতীর্ণ করেছি আমাদের বান্দার উপরে, তাহলে এর মধ্যকার একটি সূরার মত উপস্থাপন করে দেখাও এবং তোমাদের সকল সাহায্যকারীদের ডেকে নাও- আল্লাহকে বাদ দিয়ে, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকো।
২৪) অতপর যদি তোমরা না কর- এবং কখনই তা তোমরা পারবে না, সুতরাং দোযখের আগুনকে ভয় কর, যার জ্বালানী হবে মানুষ ও পাথরগুলো- প্রস্তুত করা হয়েছে অবিশ্বাসীদের জন্য।
২৫) এবং সুসংবাদ দাও তাদেরকে যারা বিশ্বাস করে এবং সৎ/ ন্যায়ানুগ/ ধর্মণিষ্ঠ কাজ করে যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্না'ত (বাগ-বাগিচা) যার তলদেশে নদনদী প্রবাহিত। প্রতিমুহূর্তে তারা সেখানে খাবার হিসেবে ফলফলাদি প্রাপ্ত হলে তারা বলে, "এ তো অবিকল তাই যা আমাদের ইতিপূর্বে সরবরাহ করা হয়েছিল," আর তাদেরকে সেখান থেকে প্রদান করা হবে সঠিক মাত্রায়, তাদের জন্য সেখানে রয়েছে শুদ্ধাচারী সিঙ্গি-সাথি এবং তারা তন্মধ্যে অনন্তকাল বসবাস করবে।
২৬) নিঃসন্দেহে আল্লাহতায়ালা মশা কিংবা তদূর্ধ্ব বস্তু দ্বারা উপমা পেশ করতে লজ্জাবোধ করেন না। অতঃপর যারা বিশ্বাসী তারা জানে যে, এটা তাদের প্রভুর পক্ষ থেকে উপস্থাপিত নির্জলা সত্য। আর যারা অবিশ্বাসী তাদের অবস্থা এরূপ যে তারা বলে, এরূপ উপমা উপস্থাপনে আল্লাহর উদ্দেশ্যটা কি? এর দ্বারা কেউ ভীষণভাবে বিপথগামী হয়ে যায়, আবার এর দ্বারা তিনি গভীরভাবে পথ প্রদর্শনও করেন; আর এর দ্বারা বেপরোয়া অবাধ্যরা ছাড়া কেউ বিপথগামী হয় না।
২৭) যারা আল্লাহ প্রদত্ত চুক্তিপত্র (তাঁর কিতাবের বিধান) ভঙ্গ করে তা অনুমোদন/ দৃঢ়ীকরণ হওয়ার পরও এবং আল্লাহ পাক যা অবিচ্ছিন্ন রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন তা ছিন্ন করে, আর পৃথিবীর বুকে ফাসাদ (অবক্ষয়/ দাঙ্গা-হাঙ্গামা) সৃষ্টি করে, ওরাই তো ক্ষতিগ্রস্থ।
২৮) কেমন করে তোমরা আল্লাহর ব্যাপারে অবিশ্বাস পোষণ করছ? তোমরা তো ছিলে নিষ্প্রাণ, অতঃপর তিনিই তোমাদেরকে জীবনদান করলেন, আবার তিনি তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন। পুনরায় তোমাদেরকে জীবনদান করবেন, তখন তাঁরই কাছে তোমাদেরকে ফিরে যেতে হবে।
২৯) তিনিই সেই সত্তা যিনি তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন যা কিছু পৃথিবীতে রয়েছে তার সমস্তই। তারপর তিনি মনোনিবেশ করলেন আকাশের প্রতি এবং তিনি তা সপ্ত আকাশমণ্ডলে সুবিন্যস্ত করলেন; আর তিনি সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ।
৩০) আর যখন তোমার পালনকর্তা ফেরেশতাদের বললেন, "আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি বানাতে যাচ্ছি, তখন ফেরেশতারা বলল, "তুমি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে বানাবে যে এর মাঝে ফাসাদ (সন্ত্রাস/ লুন্ঠন/ অবক্ষয়/ দাঙ্গা-হাঙ্গামা) ছড়িয়ে দেবে এবং রক্তপাত ঘটাবে? আর আমরাই তো তোমার মহিমা স্মরণ করে গুণকীর্তন করছি এবং তোমার পবিত্রতা ঘোষনা করছি।" তিনি বললেন, "নিঃসন্দেহে আমি জানি, যা তোমরা জান না।"
৩১) এবং আল্লাহতা’আলা শিক্ষা দিলেন আদমকে- তদীয় সবকিছুর নামাবলি (সম্পর্কে), তারপর সেগুলোকে পেশ করলেন ফেরেশতাদের সামনে। অতঃপর বললেন, "আমাকে এসবের নামগুলো সম্পর্কে তোমরা বলো দেখি, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক।"
৩২) তারা বলল, তুমি পবিত্র! আমাদের কোন জ্ঞানই নেই তা ব্যাতিত যা কিছু তুমি আমাদেরকে শিখিয়েছ। নিশ্চয় তুমিই সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
৩৩) তিনি বললেন, "হে আদম! তাদেরকে অবহিত কর এসবের নামাবলী সম্পর্কে। অতঃপর যখন সে তাদেরকে অবহিত করলো সে সবের নামাবলী সম্পর্কে, তখন তিনি বললেন, "আমি কি তোমাদের বলিনি, "নিঃসন্দেহে আমি আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর গায়েব (অদৃশ্য/ অধ্যাত্ম বিষয়) সম্পর্কে অবগত রয়েছি? এবং আমি জানি যা তোমরা প্রকাশ কর এবং যা তোমরা গোপন কর।"
৩৪) এবং যখন আমরা (আল্লাহ- সম্মান সূচক-১) ফেরেশতাদেরকে বললাম, "আদম কে সেজদা কর" তারা সিজদা করলো- ইবলিস ব্যতীত; সে প্রত্যাখ্যান করল, সে দাম্ভিক ছিল এবং অবিশ্বাসীদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেল।
৩৫) এবং আমরা (আল্লাহ- সম্মান সূচক) আদমকে বললাম, "হে আদম! তুমি ও তোমার সাথি (স্ত্রী/ জোড়া) জান্নাতে বসবাস কর এবং (উভয়ে) খাও তা থেকে স্বাচ্ছন্দে যখনই তোমরা (উভয়ে) চাও, কিন্তু (উভয়ে) এ গাছটির নিকটবর্তী হইও না- অন্যথা তোমরা (উভয়ে) অত্যাচারীদের/ দুরাচারদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবে।
৩৬) অতঃপর শয়তান তাদের (উভয়কে) [(هُمَا)- PRON – 3rd person dual object pronoun] সেখান থেকে পদস্খলিত করল এবং সে তাদেরকে (উভয়কে) বের করে দিল তাদের অবস্থান থেকে; এবং আমরা (আল্লাহ- সম্মান সূচক) বললাম, "(সকলে) অধঃপতিত হও, তোমাদের মধ্যকার কতিপয় একে অপরের শত্রু এবং তোমাদের জন্য পৃথিবীতে আছে বসবাসের স্থান ও সংস্থান- কিছু সময়ের জন্য।"
৩৭) অতঃপর আদম তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে কিছু বাণী প্রাপ্ত হল, অতঃপর তিনি (আল্লাহ) তার দিকে ফিরলেন, নিঃসন্দেহে তিনিই বারেবারে ফেরেন এবং অসীম দয়াময়।
৩৮) আমরা (আল্লাহ-সম্মান সূচক) বললাম, "তোমরা সবাই (jamīʿan) এখান থেকে অধঃপতিত হও, অতঃপর যখন তোমাদের কাছে আমার পক্ষ থেকে কোন পথনির্দেশ পৌঁছে, তখন যে কেউ আমার পথনির্দেশনা অনুসরণ করে, তাদের উপর কোন ভীতি আসবে না এবং তারা অনুতাপে কষ্টও পাবে না।"
৩৯) আর তারা, যারা অবিশ্বাস করে এবং আমাদের আয়াত সমূহ (নিদর্শনাবলি) অস্বীকার (মিথ্যা প্রতিপন্ন) করে, তারাই আগুনের বাসিন্দা; তারা অন্তকাল এর মাঝে থাকবে।
৪০) হে বনী-ইসরাঈল! স্মরণ কর, আমার সে অনুগ্রহ যা আমি তোমাদের উপরে অর্পণ করেছি; আর পূরণ কর আমার (সাথে কৃত) চুক্তিপত্র, আমিও তোমাদের (সাথে কৃত) চুক্তিপত্র পূরণ করব এবং কেবল আমাকেই ভয় কর।
৪১) আর বিশ্বাস কর যা আমি প্রেরণ করেছি- তোমাদের কাছে যা আছে তার সত্যায়নকারী হিসেবে; আর তোমরা প্রথমেই এর অস্বীকারকারী হয়ো না এবং আমার আয়াতের বিনিময়ে স্বল্প মূল্য নিও না; আর কেবল আমাকে, ভয় কর আমাকেই।
৪২) তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত ও গোপন করো না- যখন তোমরা তা জানো।
৪৩) আর নামায কায়েম কর, যাকাত দাও (দরিদ্রদের হক আদায়ে দান কর) এবং অবনত হও, তাদের সাথে যারা অবনত হয়।
৪৪) তোমরা কি মানুষকে সৎকাজের নির্দেশ দাও এবং নিজেরাই ভুলে যাও? অথচ তোমরা কিতাব পাঠ কর! তারপরও কি তোমরা বোঝ না?
৪৫) এবং সাহায্য প্রার্থনা কর ধৈর্য ও সালাতের (নামাযের) মাধ্যমে, অবশ্যই তা কঠিন (অন্যদের কাছে), বিনয়ীরা ব্যাতিত—
৪৬) যারা বিশ্বাস করে, তাদের সাক্ষাত হবে তাদের প্রভুর সাথে এবং তাঁরই দিকে তারা ফিরে যাবে।
৪৭) হে বনী-ইসরাঈল! তোমরা স্মরণ কর আমার অনুগ্রহের কথা, যা আমি তোমাদের উপর অর্পণ করেছি এবং সেটা হচ্ছে, আমি তোমাদেরকে বুজুর্গী/ মাহাত্ম/ শ্রেষ্ঠত্ব/ উচ্চমর্যাদা দিলাম জগৎসমূহের উপর।
৪৮) আর তোমরা ভয় কর একটি দিনের, (যখন) কেউ কারও জন্য কোন কাজে আসবে না এবং তার পক্ষ থেকে কোন সুপারিশ গৃহীত হবে না এবং তার কাছ থেকে ক্ষতিপূরণও নেয়া হবে না এবং তারা কোন রকম সাহায্যও পাবে না।
৪৯) আর যখন আমরা (আল্লাহ- সম্মান সূচক) তোমাদেরকে মুক্তিদান করেছিলাম ফেরাউনের লোকদের কবল থেকে যারা তোমাদেরকে ভয়ানক নির্যাতন করত, তোমাদের পুত্রদের জবাই করত এবং তোমাদের স্ত্রীদেরকে অব্যাহতি দিত; আর এর মাঝে তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে এক মহা পরীক্ষা ছিল।
৫০) আর যখন আমরা (আল্লাহ- সম্মান সূচক) তোমাদের জন্য সাগরকে বিভক্ত করেছিলাম, অতঃপর তোমাদেরকে বাঁচিয়ে দিয়েছিলাম এবং ডুবিয়ে দিয়েছিলাম ফেরাউনের লোকজনকে; আর তোমরা চেয়ে চেয়ে দেখছিলে।
৫১) আর যখন আমরা নির্ধারন/ ধার্য করলাম মূসার জন্য চল্লিশ রাত্রি, তখন তোমরা বাছুরকে গ্রহণ করলে তার অনুপস্থিতিতে, আর তোমরা হলে জালিম/ অন্যায়কারী।
৫২) পুনরায় ওটার পরও আমরা তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিলাম, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞ হও।
৫৩) আর যখন আমরা মূসাকে কিতাব এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী মানদণ্ড দান করলাম, যাতে তোমরা পথের দিশা পাও।
৫৪) আর যখন মূসা তার সম্প্রদায়কে বলল, "হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা নিজেদের প্রতি অন্যায় করলে বাছুরটিকে (তোমাদের উপাস্য রূপে) গ্রহণ কোরে; সুতরাং তোমরা অনুতপ্ত হয়ে স্বীয় স্রষ্টার দিকে ফিরে আস এবং তোমাদের সত্তা সমূহ বিসর্জন দাও, ওটাই তোমাদের জন্য শ্রেয়- তোমাদের স্রষ্টার নিকট।" অতঃপর তিনি তোমাদের প্রতি ফিরলেন; নিঃসন্দেহে তিনিই ক্ষমাকারী, পরম দয়ালু।
৫৫) আর যখন তোমরা বললে, “হে মূসা! কখনই আমরা তোমাকে বিশ্বাস করিনা, যতক্ষণ না আমরা আল্লাহকে প্রকাশ্যে দেখছি”। অতঃপর তোমাদের পাকড়াও করল বিদ্যুৎ আর তোমরা তাকিয়ে থাকলে।
৫৬) অতঃপর আমরা তোমাদেরকে উঠিয়ে/ জাগিয়ে দিলাম তোমাদের মৃতবৎ অবস্থা থেকে, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞ হও।
৫৭) আর আমরা তোমাদের উপর মেঘমালার ছায়া দান করলাম এবং তোমাদের জন্য খাবার পাঠালাম 'মান্না' ও 'সালওয়া'- (বললাম) "খাও সেসব পবিত্র জিনিস যা আমরা তোমাদেরকে সরবরাহ করেছি;" আর তারা আমাদের কোন ক্ষতি করেনি, বরং তারা নিজেদেরই ক্ষতি সাধন করেছিল।
৫৮) আর যখন আমরা বললাম, "প্রবেশ কর এ নগরীতে এবং এর মাঝে যেখানে খুশী তৃপ্তি মতো তোমরা খাও এবং দরজা দিয়ে প্রবেশ কর নতশিরে, আর সবাই বল 'ক্ষমা চাই'- আমরা ক্ষমা করব তোমাদের অপরাধসমূহ এবং আমরা সৎকর্মশীলদেরকে সমৃদ্ধ করবই।"
৫৯) অতঃপর জালিমরা পাল্টে দিয়েছে কথা, যা তাদেরকে বলে দেয়া হয়েছিল তা থেকে। সুতরাং আমরা পাঠালাম জালিমমদের উপর আযাব আসমান থেকে, নির্দেশ অমান্য করার কারণে।
৬০) আর যখন সে তার সম্প্রদায়ের জন্য পানি চাইল, তখন আমি বললাম, "আঘাত কর তোমার যষ্ঠী/ লাঠি দ্বারা শিলাটিতে।" অতঃপর প্রবাহিত হলো তার মধ্য (Stagnant aquifer) থেকে বারটি ফোয়ারা/ প্রস্রবণ/ উৎস কুপ; বস্তুত সব লোকেরাই চিনে নিল তাদের পানি পানের স্থান (ঘাট)। (বললাম) “খাও ও পান কর আল্লাহর দেয়া জীবিকা থেকে, আর পৃথিবীতে অন্যায় ও বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে দিওনা।”
৬১) আর যখন তোমরা বললে, "হে মূসা! আমরা একই ধরনের খাদ্য-দ্রব্যে কখনও ধৈর্যধারণ করব না, সুতরাং তুমি আমাদের জন্য প্রার্থনা কর- তোমার প্রভু আমাদের জন্যে এমন বস্তুসামগ্রী নিয়ে আসুক যা জমিতে উৎপন্ন হয় এবং এর ফল-ফলাদি, রসুন, মসুরি, পেঁয়াজ ইত্যাদি।" তিনি বললেন, "তোমরা কি এমন কিছু নিতে চাও যা নিকৃষ্টতর তার পরিবর্তে যা উত্তম? তোমরা কোন নগরীতে উপনীত হও এবং অবশ্য অবশ্যই তোমরাদেরকে দেয়া হবে যা কিছু তোমরা চাচ্ছ।" আর তাদের উপর আরোপিত হল লাঞ্ছনা ও দরিদ্রাবস্থা এবং তারা অর্জন করল আল্লাহর গোস্বা; এর কারণ হলো তারা আল্লাহর আয়াত-সমূহ/ নিদর্শনাবলি অবিশ্বাস করত এবং নবীগণকে অন্যায়ভাবে হত্যা করত, ঐ জন্য যে তারা আদেশ অমান্য করেছিল এবং তারা ছিল সীমালঙ্ঘনকারী।
৬২) নিশ্চয় যারা বিশ্বাস করলো এবং যারা ইহুদী, নাসারা ও সাবেঈন হলো— যে কেউ বিশ্বাস করলো আল্লাহর প্রতি ও শেষ দিবসের (কিয়ামত) প্রতি এবং সৎকাজ করলো, তাদের জন্য রয়েছে পুরস্কার তাদের প্রভুর নিকটে, আর তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না।
৬৩) আর যখন আমরা তোমাদের অঙ্গীকার নিয়েছিলাম এবং তুরকে (পর্বত) তোমাদের উপর তুলে ধরেছিলাম, (বলেছিলাম), "তোমরা গ্রহণ কর যা আমরা তোমাদের দিয়েছি দৃঢ়তার সাথে এবং স্মরণ ও অনুধ্যান কর যা এর মাঝে রয়েছে, হয়ত তোমরা ভীরু ও ন্যায়নিষ্ঠ হবে।"
৬৪) অতঃপর তোমরা ফিরে গেলে তা থেকে এর পরেও, সুতরাং যদি আল্লাহর ক্ষমা ও তাঁর দয়া তোমাদের উপর না থাকত, অবশ্যই তোমরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে যেতে।
৬৫) এবং নিশ্চয় তোমরা ওদের জানতে যারা সীমা লঙ্ঘন করেছিল শনিবারে; অতঃপর আমরা তাদের বলেছিলাম, "তোমরা হয়ে যাও তুচ্ছ গরিলা/ শিম্পাঞ্জি (বানর)।"
৬৬) সুতরাং আমরা এটিকে বানালাম লাঞ্ছনাকর শিক্ষা তাদের জন্য তাদেরই সম্মুখে ও পরবর্তীদের জন্য এবং এক হুঁশিয়ারি ধর্মিষ্ঠদের জন্য।
৬৭) যখন মূসা তার সম্প্রদায়কে বলল, "বস্তুত আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশকরেছেন যে তোমরা একটি গরু জবাই কর।" তারা বলল, "তুমি কি আমাদের সাথেউপহাস করছ?" সে (মূসা) বলল, "আমিআল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি মূর্খদেরঅন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে।"
৬৮) তারা বলল, "তুমি তোমার পালনকর্তারকাছে আমাদের জন্য প্রার্থনা কর যেনআমাদের কাছে পরিষ্কার করা হয় সেটি কিধরনের।" মূসা বলল, "তিনি বলছেন, নিঃসন্দেহে সেটা হবে একটা গরু, যা বুড়োনয় এবং বাচ্চা নয়, এ দুয়ের মাঝামাঝি মধ্যবয়সী। সুতরাং তাই কর যা তোমাদের আদেশকরা হয়েছে।"
৬৯) তারা বলল, "তুমি তোমার পালনকর্তারকাছে আমাদের জন্য প্রার্থনা কর যেনআমাদের কাছে পরিষ্কার করা হয় সেটি কিরঙের।" মূসা বলল, "তিনি বলছেন, নিঃসন্দেহে সেটা হবে একটা হলুদ রঙেরগরু, যা অতি উজ্জল বর্ণের- পছন্দনীয়দর্শকদের কাছে।"
৭০) তারা বলল, "তুমি তোমার প্রভুর কাছেআমাদের জন্য প্রার্থনা কর যেন আমাদেরকাছে স্পষ্ট করা হয় সেটি কিরূপ; বস্তুতসকল গরুই আমাদের কাছে একই রকমদেখায়, এবং নিঃসন্দেহে আমরা যদি আল্লাহচান তো অবশ্যই সঠিক পথে চালিত হব।"
৭১) সে (মূসা) বলল, বস্তুত তিনি বলেছেন, "নিশ্চয় এটি একটি গরু যা ভূমিকর্ষণ ওখেতে পানি সেচ কর্মে পরিশ্রান্ত নয়- সমর্পিত, যেটিতে নেই কোন দাগ বা খুঁত।" তারা বলল, "এবার তুমি সত্য সহ এসেছ।" অতঃপর তারাসেটা জবাই করল এবং তারা এটির আশেপাশেও ছিলনা এমনটি করার সময়।
৭২) আর যখন তোমরা একটি জীবকে হত্যা করলে, অতঃপর এ বিষয়টি থেকে দৃষ্টি ফেরাতে চাইলে, আর আল্লাহ তা প্রকাশ করে দিলেন যা তোমরা গোপন করছিলে।
৭৩) সুতরাং আমরা বললাম, "তোমরা মিলাও/ সংযুক্ত কর (ضرب - hit, strike, pommel, belittle, poke, connect) এটাকে ঐটির কোন অংশের (অঙ্গের) সাথে (মাঝে) [তোমরা আঘাত কর/ খোঁচা মার/ ঝাপটা মার এটাকে ঐটির কোন অংশ দিয়ে]।" এভাবেই আল্লাহ পুনরায় জীবিত করেন মৃতকে এবং তোমাদেরকে তাঁর নিদর্শন সমূহ প্রদর্শন করেন- যেন তোমরা অনুধাবন কর।
[(ضرب)- যারাবুন- অর্থ- এক বস্তুকে অন্য বস্তুর সাথে মিলানো- "আল-কাওসার"- আধুনিক আরবী বাংলা অভিধান- মদীনা পাবলিকেশন্স।]
৭৪) অতঃপর কঠিন হয়ে গেল তোমাদেরঅন্তরগুলো এর পরেও এবং সেগুলো হয়েগেল প্রস্তরময় ভূমি-স্তরগুলোর মত অথবাকাঠিন্যে আরও সুদৃঢ়। আর বস্তুত প্রস্তরময়ভূমি-স্তরগুলোর মধ্য থেকে অবশ্যই ঐজিনিস, বাহিত করে তার মধ্য থেকেস্রোতস্বিনি/ জলধারা সমূহ, আর বস্তুত তারমধ্য থেকে অবশ্যই ঐ জিনিস ফাটল বা চিড়ধরায়/ বিদীর্ণ করে, অতঃপর বের হয়ে আসেতার মধ্য থেকে পানি (ফোয়ারা/ প্রস্রবণ/ ঝর্ণা/ উৎস-কুপ/ জলপ্রপাত/ নদী) এবংবস্তুত তার মধ্য থেকে অবশ্যই ঐ জিনিসপতিত হয়/ নিচে নেমে যায় আল্লাহর সম্ভ্রমে! আর আল্লাহ বে-খবর নন তোমরা যা কর।
[হাজেরুন- অর্থ- প্রস্তরময় ভূমি - "আল-কাওসার"- আধুনিক আরবী বাংলা অভিধান- মদীনা পাবলিকেশন্স।]
৭৫) তোমরা কি আশা কর যে, তারা তোমাদের বিশ্বাস করবে? আর নিশ্চয় তাদের মধ্যে এক পক্ষ রয়েছে, যারা আল্লাহর বাণী শ্রবণ করে, অতঃপর তারা তা বিকৃত করে দেয় তা বোঝার পরেও এবং তারাও তা জানে।
৭৬) যখন তারা মিলিত হয় বিশ্বাসীদের সাথে, তারা বলে, "আমরা বিশ্বাসী হয়ে গেছি।" আর যখন পরস্পরের সাথে নিভৃতে অবস্থান করে, তখন বলে, "তোমরা কি তাদের কাছে বলে দিচ্ছ যা আল্লাহ তোমাদের কাছে প্রকাশ করেছেন, যাতে তারা বিতর্ক করে এ নিয়ে তোমাদের প্রভুর সামনেই? তোমরা কি তা বুঝতে পারছো না?"
৭৭) তারা কি জানে না যে, আল্লাহ জানেন যা তারা গোপন করে এবং যা তারা প্রকাশ করে?
৭৮) তোমাদের মধ্যে কিছু লোক অশিক্ষিত (উম্মী-ঊনা), যারা স্বপ্নচারিতা ছাড়া আল্লাহর কিতাবের কিছুই জানে না। তাদের কাছে কল্পনা ছাড়া কিছুই নেই।
৭৯) অতএব আফসোস তাদের জন্যে যারা নিজ হাতে গ্রন্থ লেখে এবং তারপর তারা বলে, "এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে"- এর দ্বারা যৎসামান্য মূল্য লেনদেন করার জন্য, অতএব দুঃখ তাদের প্রতি তাদের স্বহস্তে লেখার জন্য এবং দুঃখ তাদের প্রতি তাদের উপার্জনের জন্যে।
কোন মন্তব্য নেই